Sunday 19 July 2020

কবিতা

শাপলা পর্ব -৭

কবি তৈমুর খান এর কবিতা-



১।।   ∆ নৌকা বিলাস ∆

 

 দাঁড় টেনে যাচ্ছি

 কে কে আছ আমার নৌকায়?

 সারারাত খিদে, চোখে অন্ধকার

 বাতাস সুচের মতো ঠান্ডা

 বিঁধে যায় বুকের পাঁজর


 আমারই শ্বাস-প্রশ্বাসে বেজে উঠছে ক্লান্তির ঘোড়ারা

 আমারই রক্তের ভেতর সঙ্ঘবদ্ধ বিক্ষোভ


 ক্রুদ্ধ আর মরচে পড়া আদিম প্রশ্রয় গর্জে ওঠে

 নৌকা টাল খায়, মুণ্ডুহীন মানুষের নোনাঘ্রাণ ছোটে


 কে কে আছ আমার নৌকায়?

 হা-হল্লায় বাতাসের ঝরে কণ্ঠস্বর





২।।  ∆ জাদুকর ∆

   

 যতদূর জাদুকর নিয়ে যায়

 ততদূর যাই

 কোথাও থামি না, পাথরে পাথরে ক্রিয়া

হাঁটাধর্ম–

 জাদুকরকে মা-বাপের মতো ভেবে চলে যাই


সে অনেক দূর, রাস্তায় পিপাসা পায়

একটা কমা দাও অন্তত–

কোথায় টিউবওয়েল আছে খুঁজে দেখি।

রাত্রে যদি একটা পূর্ণচ্ছেদ দাও

দাঁড়িয়ে যাই বিমোচন আঁধারে–

 কোথায় আত্মজনেষু,একটিবার চুমু খাব;

 অন্তত চুমুও একপ্রকার খাদ্য!


 জাদুকর ছড়ি ঘুরিয়ে হাসে

 আর মাথার টুপি খুলে দেখায়–

 টুপি থেকে উড়ে আসে সাদাকালো একজোড়া হাঁস–

 হাঁসের নিয়তির মতো আমরাও তার অবজ্ঞার দাস!




৩।।  ∆ আত্মহত্যার ভূমিকা ∆

   

 কোনো সুবিদিত গান মনে আসে নাকো

 আমাকে ডাকে না আর কোনো রবীন্দ্রনাথ

 মদের দোকানের পাশে এই সন্ধ্যা

 আজ আমার ঈশ্বর


 আমাদের মৃত্যুর প্রস্তাবনায়

 আজ লেখা হবে আনন্দ অধ্যায়

 সমস্ত বিজ্ঞাপন জুড়ে

 কাক উড়ে


 দুর্ভিক্ষ, ছিন্ন স্নায়ুর করতলে মোহময় ঘুম

 দাঁড়িয়ে পড়েছে ছায়া

 আমাদের জৈবিক অন্তরালে

 ব্রহ্মনাভি জ্বলে


 কান্নার মেঘ এসে লিখে যায় হাসি

 নিকানো উঠোনে দুঃখ

 অনৈতিক অন্ধকারে

 দুর্বিনীত জ্বর।




 ৪।।  ∆ রাতের বিষণ্ণ পদাবলি ∆

  

  সারারাত এ-গলি সে-গলি

 রাধা কেঁদে কেঁদে গায় রাতের বিষণ্ণ পদাবলি

 তার নাভিকুণ্ডে ফুটে ওঠে সর্পগন্ধা ফুল

 সে এখন সাপ ডাকে, সাপিনী বঞ্চুল

 মগ্ন আঁধারে দেহ ভাসে

 দেহ আর দেহ নয় রস ও  রভসে

 ঢুকে পড়া স্রোত–

 কিছুটা আগুন সেঁকা, কিছুটা নির্বোধ

 আমাদের ইচ্ছেঘর তাকে চায়

 গোপন আশ্রয়

 ডাকে বার বার–

 ভাঙা পয়ার

 ছিন্ন লয়

 বিদ্যুৎ সম্ভার…..




  ৫।।   ∆ এই নাও দস্তখত ∆

      

 এই নাও আশাহীন জীবনের প্রেম

এই নাও বাসাহীন জীবনের ভালোবাসা

 এই নাও সুখহীন এসুখের লিপি

এই নাও বেদনার রক্তরাঙা জবা।


 সব কথা শেষ হলে কথা কয় কবি

 সব স্বপ্ন ভেঙে গেলে স্বপ্ন দ্যাখে স্মৃতি

 সব ফুল ঝরে গেলে গন্ধে থাকে রং

 সব ভোর দীপ্ত করে বিষাদের গান।


তবে


এই নাও দস্তখত–সমস্ত জীবন

এই নাও মন্ত্রহীন পূজা

এই নাও বিষণ্ণ দুপুর কাঁদা বুক

এই নাও ভাঙা আরশির ভুবন রাঙা মুখ!


 তুমিও নদীর কাছে এসে

 উচ্চারণ কোরো ভালোবাসা

 তুমিও জানালার ধারে এসে

 মুছে দিয়ো যত ধুলো–


 তুমিও এই অন্ধকারে এসে

 লিখে যেয়ো–এ তোমার মানবিক নাম।




অলংকরণ - অনন্যা দাস

°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°

1 comment:

  1. খুব ভালো লাগলো । Long live poet..

    ReplyDelete