Friday, 31 July 2020

কবিতা

শাপলা পর্ব -১১

কবি মধুমিতা বেতাল এর কবিতা-






১।।  ∆ খসে পড়া সময়ের গান ∆



জামা থেকে ছেঁড়া টুকরোগুলো
খসে পড়ে যেতে চায়...। 
দার্শনিক দৃষ্টি চোরকাঁটার মতো
জড়িয়ে ধরে শুধু, জোড়া লাগাতে পারে না!

মেমোরি ঘেটেঘুটে দেখি 
কবে যেন কোথায় দেখেছি।
অনেক কষ্টে মনে পড়েছে...
সে তো তখন খুব ছোটো ছিলাম।

মাগো খুব ক্ষিদে পেয়েছে,
হাত পেতে থাকি চোখের সামনে।
খুচরো আছে কি? থাম দেখি, এই নে বলে
দৌড়ে পালিয়ে গেল সময়।

আমায় কি মনে রাখবে?
আমিও তো রাখবো না,
কে জানে কেউ কি মনে রাখে!





২।।   ∆ প্রযত্নে মহাবিশ্ব ∆



কবিতার পাশে বসে ঘন অন্ধকারে 
শরীরের গল্প শুনছিলাম...।
পুরো রাত্রিটাই পপকর্নের ঠোঙায় মিশিয়ে
একটু একটু করে খেয়ে ফেলছি...।
পোড়া পিয়ানো থেকে অজানা সুর ভেসে আসছে,
ধোঁয়ার সাথে উড়ে আসছে মিষ্টি গন্ধ।
বুঝলাম পুড়েও কত সুখ !
শক্তিশেলের মতো প্রশ্ন ছুটে আসে...
আমি পালিয়ে যাচ্ছি কোথায় ?

এবার বোধহয় গল্পের বিরতি।
চাঁদবিহীন খোলা হাওয়া ক্রমাগত ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে মহাশূন্যের গভীর থেকে আরও গভীরে।
আরোও দ্রুত ছুটে যাচ্ছে শহর গ্রাম জল মাটি...।
কোথায় যায় এরা !
উলকিগুলো চামড়া সমেত রেখে এসেছি
কোনো এক প্রেমিকের তীক্ষ্ণ চোখে।
সারাজীবনের উপার্জিত লাইক,কমেন্ট, শেয়ারগুলো খুব যতনে মহাজাগতিক খামে ভরে পোস্ট করেছি বুকের ডাকবাক্স থেকে।





৩।।    ∆ প্রশ্নোত্তর ∆



কাঁদানোর জন্যে সবসময় কাউকে লাগবে এমন কোনো কথা নেই ।
শোনার জন্যেও না...।
তবে মাঝে মাঝে শূন্যতা খুব কঁদায়,
নির্জনতাও মন দিয়ে কান্নার কথা শোনে।

রাত্রি হলেই তারা খোঁজা অথবা বৃষ্টি হলেই রামধনু...
এটা কিন্তু ধীরে ধীরে অভ্যেসে...।
পা-টিপে টিপে পিচ্ছল পথ পেরোলে যে আনন্দ আসে, তার ওপর ভর দিয়ে আরও অনেকটা পথ হেঁটে যাওয়া যায়।

রতিশাস্ত্রের স্বাদ অথবা
পোশাকে এসেন্সের ম ম
টেনে রাখবে ঘরের চার দেওয়ালে ...? কতদিন...!
এক নারী, এক পুরুষ
অথবা নারী-পুরুষ
কোনটা কতটা সত্য কে জানে!

সবপ্রশ্নের সঠিক উত্তর অবশ্য সবার জানা থাকে না।





৪।।   ∆ শুনিনি যে কথা.... ∆



যে অসুখে ডুবে গেছি হাজার বছর
সে গল্প তো লিখেছি অনেক...।
আজ লিখবো যে কলমের প্রতিটা আঁচড়েই
ছবি হয়ে থেকেছি আমি।
যে কথা শুনিনি, যে ব্যাথা বুঝিনি কখনোও...
           আকুতির পলকে পলক রাখিনি দু-দণ্ড
      দূরত্ব মেপে দেখিনি নিঃশ্বাসে...!
                  একটুও ভালোবাসে...!
      
কেঁদে কেঁদে ওঠে
         ছিঁড়ে যায় বুক....
                    না-ঝরা ফুলের কলি ওলি-ঘ্রাণে
   লেখা হয় কয়েকশো শতাব্দীর 
                                         না দেখা মুখ।
বিশ্বাসের বিশ্বে চুপটি করে এসে
     আঁধার কালো ছায়ার পালক যখন
 গোপন হয়ে বসে...
                   খুব মনে পড়ে।
                   
খড়মের পথ বড়ো দূর্গম...
ধূ ধূ ধুলো ঝেড়ে দীর্ঘ প্রান্তরে 
কখনো দেখিনি সবুজের পাতানড়া,
দেখিনি সরোবর মাঝে পদ্মের আঁখি খোলা।

অজন্তার গুহা কোণে পোষাকের ওপর পোষাক
রেখেছি যতনে,
কি করে বলি--
          একটি রাত্রিও রাখিনি...
 কোথাও কোনো ফেরারি মনের 
                                     শান্ত মন্থনে।
 
জানি আজও বলবে--
একটু বসো সিন্ধু সৈকতে তুমি 
                অনামিকা স্রোতে ডুবে তুলে আনি
                সহস্র নামের মালা
            সাজাবো নতুন করে মন্দিরের
            মূর্তিখানি,
    হোক না যতোই  অবেলা।





৫।।    ∆ বৈরাগীর ক্যানভাস ∆


‌কবে কোন নদী ধুয়ে গিয়েছিল
‌ঠোঁটের নেশায় মনে নেই... ।
‌দীর্ঘ ঘুম মরণের চোখের কোনায়
‌সমাধি হয়েছে মৌরাতের ভাষা।
‌কোন ফাঁকে চাঁদ এসে বসে গেল 
‌খুব কাছে, নিঃশ্বাসে নিঃশ্বব্দে!
‌চোখে ছিল পারিজাতের সাম্রাজ্য,
‌মুখে কবিতার অমল গন্ধ...।
‌দূরত্ব ভেঙে গেছে অনেক আগেই
‌আদিমতার পায়ে পায়ে।
‌ভ্রু-ইশারার সূক্ষ্ম আলিঙ্গনে
‌গভীর অন্ধকার কখন ঘুমিয়ে গেছে
‌পাহাড়ি  বুকে।
‌ক্যানভাসে শুয়ে আছো তুমি 
‌এলাচের ফুল হয়ে, তাকাও বৈরাগী...
‌দেখ পদ্মকলির মতো চিবুক তুলে।
‌চন্দনের সুগন্ধে নিখুঁত বুনেছি তোমায় 
‌সন্ন‍্যাসীর তুলি ডুবিয়ে... 
‌জানো তো বড়োই বেমানান ছিল 
‌চোখ বিনা কাজল পাতার পান্ডুলিপি,
‌পা-হীন পালকির গানের মতন।
‌ধুয়ে গেছে সব রঙ প্রশান্ত জোনাকির সমুদ্রে...
‌মনন-মেঘনায় পেতে রেখেছি 
‌ঔপন্যাসিক পালঙ্ক,
‌এসো বৈরাগী এবার শরীরে সরোবর আঁকি...।




অলংকরণ - মেহবুব গায়েন

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

No comments:

Post a Comment