Friday 17 July 2020

কবিতা

শাপলা পর্ব - ৩

কবি অনুপ চন্ডাল এর কবিতা -



১।।  স্তব


খেয়েছে কবরটিরে যে-গাছ
তারে দাও অশ্রুজল
ফুল-বেলপাতা দাও
           আর
দু হাতে ছুঁয়েছ যদি ফসলের কাম
তুমিও স্নিগ্ধ হবে
বউয়ের দুধেতে তুমি পেয়ে যাবে সূর্যের স্বাদ

                  (কাব্যগ্রন্থ: বহি চলে নীল--- নামশূন্য)




২।।   গার্হস্থ্য (সংখ্যা-২)


রাতে কি জ্যোৎস্না-হননের রক্ত মেখে ঘুমিয়েছিলে?
তারও আগে ছিল তোমার আত্মহননের রক্তশোভা।
এত নীরব রক্ত পেরোতে হল ব'লেই ভোর এত শাদা!

                      ভোরে উঠে
                খুব ভোরবেলা উঠে
                   শিশির কুড়োলে
                দু হাতে শিশির ছুঁলে
                         পাপক্ষয়

কার গর্ভে আমি শিশিরের জন্ম দেখি সারারাত জেগে

                                           ( কাব্যগ্রন্থ: গার্হস্থ্য)




৩।।   মাঘপূর্ণিমায় প্রার্থনা


অস্তায়মান মাঘে আজ দেখ পূর্ণিমা হল!
কিছুই চাই নে---
এমন জ্যোৎস্নায় প্রসন্ন ক্ষেতের ভিতরে
বাঁধাকপির পাতায় পাতায় জাবিপোকা নীরবে ঘুমাক;
রয়ে যাক ত্রিকালদেখা বৃক্ষেরা এখানে-ওখানে;
বিজন স্টেশনপ্রান্তে নিথর ফলকে লেখা নাম "সিঙ্গিয়া"
                     প'ড়ে থাক অর্থাতীত চিরকাল...
                       চাই নে কিছুই---
কলা নহে, নয় প্রেম, সুধা--- শুধু এই জ্যোৎস্নায়
                       বেঁচে-থাকাটুকু;
হেমন্তে-শীতে পূর্ণিমায় পূর্ণিমায়
যেন আমি বেদনাবহনক্ষম বৃদ্ধ ক্রমে হই;
তবু যেন প্রকৃতির রীতি রক্ষা হয়---
সন্তানের আগে যেন মৃত হতে পারি!

                        ( কাব্যগ্রন্থ: সকলি সমাধিলিপি)



  
 ৪।।  কেউ তবে গাহিতেছে গান---              ভ্রমাকুল(সংখ্যা-৪০)


একদিন মাঠের ভিতরে জ্যোৎস্নায়
ঘাসের ওপর শেষ করমৈথুন সেরে নিয়ে
আমরা প্রতিজ্ঞা করি অযৌন জীবনের।
পত্নীর নিঝুম বেদনা
সন্তানের প্রস্ফুটিত ঘুম
আমাদেরে নীতিবিদ্ধ করেছে
অবশেষে।

তবু শেষাবধি
আমরা জ্যোৎস্নাবিশ্বাসী---
বিশ্বাসীই আমরা থেকে যাই:
একদিন সে তেমন হয়ে আসবেই
যে আমরা তরলিত হব স্মৃতি আর আকাঙ্ক্ষার সংরাগে;
সে আমাদের নিয়ে যাবে
নীতি যুক্তি ও ধর্মের চেয়ে বড় কোনো কবিতার মহাকাশে

(কাব্যগ্রন্থ: কেউ তবে গাহিতেছে গান---ভ্রমাকুল)



৫।।   কন্যার যৌবনে হেমন্ত


এমন মৃদুহিম রাতে আমরা কথা বলি। আমাদের দু-বছুরে মেয়ের বিমল মুখের মোহিনী শ্রীর দিকে চেয়ে আমরা মুগ্ধ কথা বলি। তার যৌবন, যে এখনও অনেক দূরে, আমাদের আঁখির আগে এসে দাঁড়ায়--- তার কথা আমরা বিমোহিত বলি, যেসব কথার কোণে কোণে লুকিয়ে থাকে তার ভরভরন্ত যৌনতা ভেবে আমাদের পরিতৃপ্তির আভাস-ইঙ্গিত। কিন্তু এসবের মধ্যে একটা চিন্-চিন্ দুশ্চিন্তা বয়ে যায় যা আমরা বলি না : তার সেই ফুল্ল-কুসুমিত কালে সে কি এমন এই মৃদুহিম পাবে? পৃথিবীর সব হেমন্ত পুড়ে চলেছে--- পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যাবে একদিন আমাদের মেয়েদের যৌবনের আগে?

                            (কাব্যগ্রন্থ: কথা রূপ রাতিয়া)



অলংকরণ - দিশা সেনগুপ্ত
           
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::

No comments:

Post a Comment