Friday, 21 August 2020

কবিতা

শাপলা পর্ব-১৪

কবি মলয় গোস্বামী’র কবিতা-





১।।  ∆ সুখের ফেউ ∆




 উজ্জ্বল মেখেছে বিষ:মোহিনী জানে না 

মোহিনীর আঙুলে কিংবা ওষ্ঠে,জিহ্বায়
যদি বিষ লেগে যায়
তাই সে ভিতরেই শুধু : বাইরে মাখেনি মাখে না তো।

উজ্জ্বল মেখেছে বিষ:মোহিনী জানে না

উজ্জ্বল পাগল নাকি ?
না হলে ভিতরে কেউ
সুখের ফেউ-এর মত নির্বিবাদে রেখে যায় বিষের প্রলেপ।
কিংবা কেউ মৃত্যু-ঘন্টা গোঁজে ?

যে যার নিজের মত ভালোবাসা বোঝে।

আয়না পারদ মাখে।মেখে মেখে উজ্জ্বল হয়।
যাকে সে সামনে রাখে, তাকে বুকে ধরে রেখে তাকেই দেখায়।
সে দ্যাখে ,কখনো কি তার বুকে আয়না নিজেকে খুঁজে পায় !

উজ্জ্বল মেখেছে বিষ: মোহিনী জানে না





২।।  ∆ বিপ্রশ্নিকা ∆




যদিও ছন্দ জানি;ছন্দবাণীর ফাঁকে ফাঁকে
এ জীবন কুয়াশাবিধুর, তার মৃত্যু লুকিয়ে রাখে।

‘বিনিপাত’ ছন্দে এলো;অর্থ বলি- অধঃপতন।
এইমত সমানুপাতে সাজিয়ে রাখি ইঁটের মতন।

কেন হয় তাও জানিনা! শুধু জানি-এখন, যেমন স্ত্রীর মুখ বন্ধ হলে শান্তি পাবো;এমন ব্যামো
পিঁপড়ের মতন, ধীরে,কুটুর কুটুর এগিয়ে এসে
জীবনের রসস্থিত ছন্দগুলি ধরছে ঠেসে।

কী এমন ছন্দ জানি! ছন্দবাণীর বিপ্রশ্নিকা
নিয়তই খুঁচিয়ে মারে এগিয়ে নিয়ে মৃত্যুটিকা!
এ-ঘরে ধুতরো বীচি, তার ওপরে খোদাই করি :যদিও পীযূষ-ই চাই: দিন তো গেল এবার হরি ।


হরি হে দিন তো গেল, সন্ধে হলো-রাত্রি এবার!
আগামী রৌদ্র এলে- একটা কাজই ছিনিয়ে নেবার ।






৩।।   ∆ খুন ∆




খেয়েছে আলমারি ন্যাপথলিন। তবু আমি প্রায় প্রায়ই চাবিটা
ঘুরিয়ে দেখি সাজানো সম্পদ; ঠিকঠাক আছে তো সব ? চারদিকে তাকিয়ে নিই,বন্ধ করি,ফের হয় লীন।কি জানি পাশেই হয়তো রয়েছে আপদ! সোনালী শরীর খানি অপলক চোখে মাপি মায়ার বহরে;ওষে বড় অভিমানী। সামান্য বৃষ্টিপাতে, সামান্য রৌদ্রতাপে কষ্ট পায়।আমিও ছাড়ি না ওকে জটিল শহরে , যদি সে হোঁচট খায় কূট কৌশল!ও আমার স্বপ্নের জলে অমন ঝিলিক দিয়ে বিম্বপ্রিয় হয়।নয়,সে তো নয় শুধু কাঠের ছন্দে গড়া জড় আনমনা।ওর মধ্যে আমি আছি; হীরা অন্তর্যামী আছে।আর আছে এক কিশোর, তার আকাশ,তার যত ফুল্ল আরাধনা।

আমি একে ঝাড়ি পুছি প্রতিদিন যতদিন পারি। ন্যাপথলিন দিয়েছি তবু ভয় করে,তালা দেখি টেনেটুনে বন্ধ ঘরে রঙিন আলমারির।

পেছনে কিন্তু তার শুরু হয় এক খেলা,সত্য,নিয়মিত।আমি আছি জীবন-অমৃতর সোজাসুজি;অথচ ওদিকে মধুর গান অন্তরে করছে গুনগুন;

ও গান শুনিনা আমি, একটুখানি সরে আসি পাশে,দেখি-ভিতরে
সবাই আছে, কিন্তু কাঠের পোকা কিযে করছে খুন!সানের উপরে অতি
বেদনা বিধুর করে সাদা গুঁড়ো আল্পনা এঁকে দিচ্ছে ঘুন।





৪।।   ∆ লন্ঠনের আলো ∆




গাছ আছে? গাছ আছে?
জিজ্ঞাসা করে যাচ্ছে বালিকা নামের এক মেয়ে।
ঘরে তার লন্ডন আছে।লন্ঠনের আলো আছে।
দূরে বাবা বসে আছেন, প্রাচীন পৃথিবীর কথা ভেবে।
আলোটা পড়েছে তাঁর পা-য়ে।

বাবাও বললেন,‘আয়।কাছে এসে বোস।’
বালিকা গিয়েছে কাছে, গাছের প্রশ্নটুকু নিয়ে।
গিয়ে দেখলো - বাবার গায়েও আছে শাখা।
আর আছে অজস্র পাতা। দুপা-য়ে শিকড়।
শিকড়েই পড়েছে সেই লন্ঠনের আলো।

বালিকার প্রশ্নটুকুই,আমাকে দিয়েই আজ এমন লেখাল ।



             

অলংকরণ -অমৃতা নায়ক

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••      ‌

No comments:

Post a Comment