Tuesday, 4 August 2020

কবিতা

কবি দেবাশিস মিশ্র’র কবিতা-





১।।    ∆ কবিতা তোমায় ∆




কবিতা তোমায় আপন করেছি কবে-
সে রূপকথার তারিখ রাখে নি কেউ।
তোমাকে ছুঁয়েছি গোপনে ও উৎসবে,
ওপরে ভেঙেছে ঢেউয়ের পরে ঢেউ।

কবিতা তোমায় আপন করেছি জেনো
সহস্র ঝড় শত মন্বন্তরে,
হৃদয়ের সাথে আত্মার লেনদেন
বসত করেছে নিজস্বতার ঘরে।

কবিতা তোমায় আপন করেছি পুরো
এটা জেনে- এই বসবাস হবে ছবি।
নহবত জুড়ে বাজবে না চেনা সুরও,
কবিতা শোনাবে নতুন দিনের কবি।

কবিতা তোমায় আজন্ম থাকি ছুঁয়ে,
কবিতা তোমায় জড়িয়ে ঝরবো ভূঁয়ে।





২।।   ∆ আহ্বান ∆




পশুর দাম তো মানুষের চেয়ে বেশী,
মানুষকে তাই কোপানো পোড়ানো যায়;
ধর্মের নামে শঠতা দোলায় পেশী
সভ্যতাহীন অনন্ত সন্ধ্যায়।

নগ্নতা ঢেকে আলোক-বিচ্ছুরণে
শাসক শোনায় রাজধর্মের বুলি;
ধ্বনি ছুটে চলে বৈদ্যু-তিন বাহনে,
আঁধারে হারায় নিষ্পাপ মুখগুলি।

ইতিউতি থাকে মানবিকতার শব,
জীবিতেরা পায় দন্ডের সন্দেশ;
এসো শুরু করি জীবনের উৎসব,
আজ গড়ে তুলি সত্যিকারের দেশ।

হদিশ তো আছে ভেতরেই, চেনা সুর,
দিকে দিকে আছে সে দিকশূন্যপুর।





৩।।   ∆ চিত্রনাট্য ∆




আগে থেকে সব ঠিক করা আছে-
সংলাপ আর ঘটনা।
বদলায় শুধু বিষয় পাঠ্য,
সাল চরিত্র কামরা।
সত্য যাচাই হবে কার কাছে?
জোর দিয়ে বলো, "রটনা।"
তোমরা বানাও চিত্রনাট্য,
অভিনয় করি আমরা।

গুনতির খেলা তোমরাই খেলো,
ভরে হিসেবের পঞ্জী।
বিকাশ বিনাশ একাকার বলে
একাসনে আম আমড়া।
'সৎ' মানে বোঝো 'ভীতু' আর 'খেলো',
বলে গড়ো চেরাপুঞ্জি।
তোমাদের নাম মানুষের দলে,
ভোট হয়ে বাঁচি আমরা।

খেলছো তোমরা যুদ্ধ যুদ্ধ,
গড়াপেটা চলে আড়ালে।
পবিত্র বই গিল্টি গয়না,
সভা আলো করে ভামরা।
সামনে সজ্জা- 'লাফিং বুদ্ধ',
পিছে দুধ খায় বেড়ালে।
নেতারা কখনো শহীদ হয় না,
ছবি হয়ে যাই আমরা।

ময়দানে সাজো নরমে গরমে,
বিনা রণে ফতে কেল্লা।
সর্বংসহ তবু প্রতিবাদী
হয় মানুষের চামড়া।
হীরকতন্ত্র উঠলে চরমে
মুকুটের খসে জেল্লা।
চিত্রনাট্য চাইছে 'আজাদী',
মঞ্চে জাগছি আমরা।




৪।।  ∆ ঠোঁট ছুঁয়েছে ∆




দু'হাতে পেতে দাঁড়িয়ে আছি,
অঝোরধারে ঝরো;
বিনির্মাণে কাল কেটেছে,
একাকী নির্মোকে
অন্তরিত স্রোতে হারায়
কথা পরস্পরও,
ঠোঁট ছুঁয়েছে তন্ত্রীগুলি
ব্যতিক্রমী শ্লোকে।

এ তির্যকে বেঁচে থাকার 
রশ্মি খুঁজে পেতে
আজানু বোধ সমস্বরে
তোমার কথা বলে।
ইতিবাচক ফুটলো ছবি
অশনি সঙ্কেতে,
ঠোঁট ছুঁয়েছে অচিন ভাষা
মায়াবী বল্কলে।

সোচ্চারে ও নিরুচ্চারে
যৌথ বসবাসে
দেয়া-নেয়ায় প্রলম্বিত
বাড়ে ঋণের ভারা।
অপার বহে স্রোতস্বিনী
নিষণ্ণ বিলাসে,
ঠোঁট ছুঁয়েছে বুকগহীনে
অবিকল্প ধারা।

হাত বাড়ালে ইচ্ছেপাখি,
ডানাতে তার ভাষা;
ঠোঁট ছুঁয়েছে আকাশ মাটি,
মগ্ন ভালোবাসা।





৫।।   ∆ যাবো ∆




পথ টেনে নিয়ে চলে এক পথ থেকে আর পথে,
এখানে বড্ড ভীড়, দুদন্ড কোথায় দাঁড়াবো?
কেউ রথে চলে যায়, কেউ কেউ ঝরেছে শপথে;
আমি তো ভিন্নগামী, আনকোরা রাস্তায় যাবো।

চাঁদের সরণি বেয়ে যেতে পারি আবছা আঁধারে,
বিনি কোলাহলে বসে কমলের নির্যাস খাবো।
ঢেউগুলো হয়তো বা আঘাত করবে কোনো পারে,
উদাসীন আমি এক অলীক মার্গ ধরে যাবো।

তোমাদের খেরোখাতা খুলে রাখো অনন্তকাল,
মাত্রা বদল হলে চরাচরে কবিতা শোনাবো।
পারানি এলেই পাড়ি, স্থির হাতে পাটনীর হাল;
অশ্রুমতীর ঘাট পিছে ফেলে ভেসে চলে যাবো।

ও মাঝি, নোঙর তোলো, আর কেন ভাবো?
দু'হাতে জীবন মেখে যাবো, যাবো, যাবো।



ক্যামেরা বন্দি - সন্দীপ কাণ্ডার

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

No comments:

Post a Comment