কবি কৌশিক বর্মন এর কবিতা-
১।। ∆ 'যতিচিহ্ন' ∆
আমার জীবনে কোনও যতিচিহ্ন নেই
সময়সরণীতে নিত্যকালের শিল্পী আমি
শৈল্পীক নগ্নতায় সুন্দরের আলো ধরে দাঁড়িয়ে আছি
ঈশ্বরের বাগানে যে দেবীমূর্তি দেখছ
তারও কোনও নাম নেই গোত্র নেই তবু
সে পুজো পেয়ে আসছে
ওই দেবীমূর্তিও কোনও যতিচিহ্ন নেই
আমি তাকে হাসতে দেখেছি সিন্ধুসভ্যতায় বৌদ্ধযুগে মুঘলসাম্রাজ্যে চৈতন্যের হাত ধরে
আজ ওই হাসির তীব্র শ্লেষ
আমার জীবনের সমস্ত যতিচিহ্ন মুছে দিয়ে গেছে
শৈল্পীত নগ্নতায়
আমি উদ্ভাসিত হয়েছি তোমার প্রেমে... কৌশিক
২।। ∆ প্রেম ∆
আমাকেই কেন বাঁধলে ভালোবাসায়
আধখেলা পূব জানালায় রেখে চোখ
রাতের পাখিকে কী গান শোনাতে চাও
শোনও মন দিয়ে তোমাকে বলছি মেয়ে
তোমাকে বলছি ঘোরাধরা পার্ক থেকে
রাতের আকাশে এখনও অনেক গান
ভেসে যায় দূর ঠিকানাবিহীন পথে
তুমি জেগে কেন লাজরাঙা ভালো মেয়ে
শোন লক্ষীটি- তোমাকে বলছি আমি
ঝড় থেমে গেলে সব কথা যাবে ভুলে
রাত শেষ হলে আজানের সুর শুনে
স্হির হবে তুমি ফল্গুচোখের জলে
৩।। ∆ সাম্যের কবি ∆
বিদ্রোহী কবি নজরুল তুমি সাম্যের কথা বলেছ
জাত- বিভেদের ঊর্দ্ধে উঠে জীবনের গান গেয়েছ
"বুকে নিরবধি বহে শত নদী" - সেই স্রোতে আজও ভেসেছ
শিকল পরে শিকল ভেঙে বন্ধুর পথে হেঁটেছ
তোমার দেখানো দুর্গম পথে শত শহীদের খুনে
"বালাশোর বুড়ি বালামের তীর" রক্তে গিয়েছে ভেসে
"জাতের নামে বজ্জাতি" ছেড়ে হিন্দু মুসলমান
একই বৃন্তে ফুল হয়ে ফোটে ভুলে সব অভিমান
কান্ডারী তুমি পথের দিশারী অগ্র পথিক গোকুল নাগ
উন্নত শির সুর সৈনিক বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত প্রাণ
সম্প্রীতি আর ভালোবাসা দিয়ে জয় করে নাও চিত্তকে
পরোয়া করো না, প্রার্থনা করো সৃষ্টি সুখের উল্লাসে
দুখু মিঞা থেকে কাজী নজরুল কাল প্রবাহের স্রোত
কত না অভাব দারিদ্র ঋণ শরীরের রোগ ভোগ
তবু ইতিহাস আজও মনে রাখে বিনম্র শ্রদ্ধায়
গানের কলিতে বেঁচে আছো কবি সাম্যের কবিতায়।
৪।। ∆ 'মৃত্যুযাপন' ∆
প্রিয় দুঃখগুলো দিয়ে একটা বাড়ি বানাব
প্রিয় স্বপ্নের বাড়ি
দরজায় ঝুলবে আফসানি রঙের পর্দা
টুকরো স্মৃতিগুলো জানালায় এঁকে দেবে
আরর্চাড সময়ের বৈচিত্র
ঝকঝকে মেঝেতে পাতা থাকবে পুরু জল রঙের কার্পেট
নিঃসঙ্গতার রঙে ভরিয়ে দেব
ভালবাসার চারদেয়াল
একদিন সেই ঘরে
গভীরতার ভেতর মিলিয়ে যাব একাকীত্বের অহংকারে
পশ্চিমের ভেন্টিলেটারে চোখ রেখে সময় সরনিতে
হলুদ পাতার মতো ঝরে পড়ব
তোমার বসন্ত বিকেলে
৫।। ∆ 'স্ট্যাচু' ∆
চশমার গ্লাসে আটকে আছে ওষ্ঠরাগ
সামনে যা কিছু সবই ঝাপসা মায়াছবি
অথচ চোখে কোনও ব্যাধি নেই
যত ব্যাধি সব মনের হারেমে
মুক্তো হয়ে বেড়ে ওঠে
আজকাল চাপচাপ অন্ধকার ঘন হয়ে নামে
বর্ণমালার সাজে রূপসঙ্গীরা
বাইশ থেকে বাহান্ন
মিলেমিশে হৈচৈ
পুরুগ্লাসে একজোড়া মাসকারা চোখ
নান্দনিক ঠোঁট সুডৌল বুক নিয়ে
একজীবনের দৃষ্টি ঝাপসা করে বহাল তবিয়তে
থর আর চেরাপুঞ্জির মাঝখানে
আমাকে স্ট্যাচু করে রেখেছে
আমি না পারি জীবনের কথা বলতে
না পারি মৃত্যুর কথা লিখতে
অলংকরণ - মেহবুব গায়েন
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
No comments:
Post a Comment