Thursday, 13 August 2020

কবিতা

শাপলা পর্ব-১৩


কবি দেবাশিস মাঝি’র কবিতা-




১।।   ∆ নিষিক্ত সংঘাতের নেপথ্যে ∆


                   
নেশার আবেগে ছায়ার প্রতিবিম্ব
ঢেউ খেলে যায় সাঁকো শরীরে
মঞ্চের নেপথ্যে অশরীরী মুখোশ
কলকাঠি নাড়তে নাড়তে রাইফেলে হাত রাখে।
সীমান্তে সীমান্তে ড্রোনের নজরদারি ...

হিমেল হাওয়ায় সোনালি সকাল
সুগন্ধি জীবন সাহচর্যে নামতার খসড়ায়
ডুব দিতে দিতে বেহুঁশ ,
উন্মত্ত শিকারীরা স্বল্প-মেয়াদী সুখে-
অন্তর্বাসে ঢাকা বৃত্তপথ পরিক্রমায় ঔৎসুক।

ভারী বিষন্ন বাতাসে জেগে উঠছে চরাচর-
বেআব্রু অভিসারী সাজে সংলাপ মুখর দিনরাত,
শান্তিজল ছিটানোর মহড়ায় কনভয়ের মৃত্যু ভয়।
সরল বিশ্বাসগুলি সংগোপনে গৈরিক ধুলোয় এক এক মধুমাস,
পাথর ভাঙ্গার গান আর বর্ণপরিচয়ের পাতায়
মন আবিষ্ট করে তোলে সরস ঠোঁটে।
ব্যারোমিটারের পারদ অনেকটা নিচে-
সুতো ছেঁড়া ঘুড়িগুলো বেপথু হচ্ছে সীমান্তের ওপারে,
তারাগুলি ঢেকে যাচ্ছে মেঘে।
আশ্চর্য এক আঁধার ধেয়ে আসছে...
নতুন গাছের শিকড়গুলো অসহায়প্রায়
অসম্পূর্ণ অক্ষরের হাত ধরে
সাঁকো পার হবো যদিও পরবর্তী পথ
ফিনফিনে কুয়াশায় ঢাকা!





২।।   ∆  কায়া- ছায়া- মায়া ∆
               


চলমান ছায়ার পিছনে ছুটছিলাম
এক অর্বাচীন অনিকেত সময়ে
তার অস্তিত্ব অবয়ব সবকিছুই নাগালের বাইরে
তবুও সেই ছায়া, কায়া হয়ে সামনে পিছনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
বিভিন্ন ভাবনা দুঃস্বপ্নের স্মৃতি
দুর্বিনীত ঘোড়া ছুটিয়ে ধরতে পারিনি,
শুধু নির্বিকার আরোহী হয়ে দেখেছি অপলকে
তার কল্পনার শরীরী লজ্জা।
অন্ধকূপের পাশে দাঁড়াই
সেই অস্বচ্ছ ছায়া এখন অতল গভীরে
কেঁপে উঠছে আমার প্রতিবিম্ব
ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা,
পরাবাস্তবতা
ছায়া কায়া নাকি কাঙ্খিত মায়া!




৩।।   ∆  বর্তমান-পুরাণ ∆
                     


কালো মোড়কে উপঢৌকন রাত
আঁতুড় ওয়ার্ডে কান্নার অনুরণন
দৈবকীর আর্তনাদ- 
এক হাঁটু জ্যোৎস্না ভেঙে
চাঁদে মুখ ডুবিয়ে নদী পারাপারে ব্যস্ত বাসুদেব।

অনায়াস তৃপ্তির অন্তরঙ্গতা,
অপার্থিব মায়াজাল মুক্তির স্বাদে আত্মহারা কংস।
আশ্চর্য সুন্দর হারানো দিনগুলি খেলা করে আজ
সমুদ্র বিছানায় নিষিদ্ধ রাত্রিকে আড়াল করে।

যশোদার এখন আলো করা সংসার
বহুতল মল, সুইমিং পুল
গোপিনীর বিকিনির মধ্যে জেগে উঠছে
হাজার আলোকবর্ষের পথ
রাবণ রাজার সীতা চুরির ছক...




৪।।  ∆ অন্তরঙ্গতা ∆
       


যে নদীর পাশ দিয়ে আমার প্রতিদিনের যাত্রা শুরু
তার জল, সূর্য থেকে বিকীর্ণ তাপ
আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে- 
আমি নাকি তার প্রতিবেশী।

যে পথ দিয়ে রোজকার 
গন্তব্যে পৌঁছাই,
সেই পথ বলে-
আমি নাকি তার আপনজন
কারন আমার পায়ের চিহ্ন
থেকে যায় তার বুকে
 ফসিল হয়ে ...
দুপুরের নৈঃশব্দভেদী ঘুঘু চিৎকার করে বলে-
এখন কালবেলা...

ভালোবাসা নাকি আজকাল প্রহসন!
কালো মেঘ উড়িয়ে মেঘ বালিকার একগুচ্ছ প্রেম
বাস্পে বাস্পে সমুদ্রে ইমারত গড়ে।
অক্ষর ও অন্তরের একাত্মতা থেকে নাকি কবিতার জন্ম,
ভালোবাসা নদী কিংবা পথ
যার জন্ম মৃত্যু সূত্রপাতের কেউ খতিয়ান রাখে না।
অক্ষর বাঁধানো আলপথ ধরে কবিতা হাঁটে
পাতায় পাতায় আল্পনা আঁকে,
ফেলে আসা স্মৃতির পাতায়
ছাপ পড়ে থাকে শুধুই অতীত
জোয়ার ভাটার আবর্তনে
চোরা বালির চরে চরে...




৫।।   ∆ সম্পর্ক ∆
            


হাতে হাত রেখে যে সম্পর্ক তৈরি হয়
প্রদীপের আলোয় ধরা পড়ে তার প্রতিচ্ছবি
মুখে মুখ রেখে যে প্রতিফলন তৈরি হয়
আয়নার শরীরে ভেসে ওঠে তার গভীরতা,
দহনের মানে বুঝতে বুঝতে
আগুন একদিন দাবানলে লাফ দেয়।

শামুকের খোলে লুকিয়ে থাকা
আস্ত একটা জীবন
পরিস্থিতি দেখে স্থান বদলায়
ঠোঁটে ঠোঁট চেপে...

মাঝরাতে চাঁদকে ছোঁবো না বলেই
অন্ধকারের দিকে পা বাড়াই,
আস্থা অনাস্থার প্ল্যাটফর্ম ছুঁয়ে
ভ্রমণ সুখের অবিনশ্বর শক্তির টানে-
সেলফোনিক দূরত্ব ভেঙ্গে
দৃশ্য অদৃশ্যের নির্বাসনে
ভালোবাসার সম্পর্ক 
ঘুরে ফিরে আসে
চিরন্তন স্পর্শের শরীর বেয়ে।



ছবি বন্দি- রাখী মাহাতো

°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°


No comments:

Post a Comment