কবি সতীন্দ্র অধিকারী’র কবিতা-
১।। ∆ অন্য ভাত অন্য ভারত ∆
১.
ভারতবর্ষের উদোম জঙ্গল থেকে ছুটে আসছে আমার
মা...
সারা গায়ে লেগে থাকা শাদা ভাত
আর ভাতেদের আত্মাহুতি!
কে- কার কাছে জানায়
প্রার্থনা...
যখন মুখুজ্জেদের ছেলে পিতার উদ্দেশ্যে তর্জনী নামিয়ে
শাল পাতায় ফেলে দেয় ভাতের ঢেলা
আর আমাদের কান্নাগুলি শুষে নেয় কোনো অ্যাক
কৃষকের গোলা ভর্তি ধান
আরও আরও চাপানো হয় পোড়া কাঠ!
জ্বলে ওঠে আগুন
জ্বলে ওঠে নাভি
যাই টুকুস করে ওদের দুটো ভাত দিয়ে আসি!
২.
কী হবে হেমন্তের বাতাসে এতখানি কাছাকাছি এসে
পড়ে থাকা জল
পৃথিবীর চাকা রাস্তা
বরাবর দাগ রাখে
অভিযোগ জানাবো না কোনো! বিন্দু বিন্দু
স্রেফ যেভাবে ভুলে যাওয়া যায়
তুমি তো জানো মাথা গোঁজার ঘর বলতে যা বোঝায়
তা- ছিল না কখনও
টিউশনির টাকায় পা ভারী হয়ে ওঠে ক্রমশ
আজও গাঁয়ে বাঁদর এলে
আমাদের মটকা ভাঙে খুব
দেখি বাবার কিনে দেওয়া সেই পিত্তি কালারের
সাইকেল
একশো মিটার দূরে তোমাদের ভারতবর্ষের রোড!
৩.
আমার মুখ ক্রমশ বাবার মুখের মতো হয়ে
উঠছে এখন! আর
পারিবারিক অসুখ
গাম্ভীর্য ছুটে যাচ্ছে গ্যাস চেম্বারের ভিতর
আমাদের হাত যেন হিম হয়ে গেছে কবে!
মনে পড়ে কর্মশিক্ষা
পরীক্ষার দিন বাবা হাতে ধরে
কীভাবে আঁকতে হয় ভারতবর্ষের মানচিত্র
আর আমি মরাইয়ের ভিতর
থেকে বের করে আনতাম বোরোধান
আর রেখায় রেখায় ভরে উঠত সেই সব ধানেদের আস্ত শরীর
এ মানচিত্র অন্য এক রৌদ্রের
অন্য এক ভারতবর্ষের
যেখানে আমাদের বোরোধানেরা তড়কা ও রুটির গন্ধে বলে উঠবে
আমাদের ভাতেরা যেন দীর্ঘজীবী হয়!
২।। ∆ মুদুন ∆
সারা রাত ঝমঝম ঝমঝম বৃষ্টি!
আর আমাদের টালির ফাঁক থেকে ঝরে পড়ছে
সেই সব দেবতাদের পা - ধোয়া জল
এক হাতে আমাদের বুকে
টেনে নিচ্ছেন বাবা আর এক হাতে
মুড়ো ঝাঁটা নিয়ে বিড়বিড় করছেন
নিজেই-
মুদুনটা দেখছি না সারালেই নয়!
৩।। ∆ দেওয়াল চিত্র ∆
আমাদের বাড়িতে দেওয়াল চিত্রের সম্ভার ছিল না
কখনও...
যখন খুব ছোটো ছিলাম দেখতাম
গরুরগাড়ি করে আনা হোত তেলিডাঙার মাটি
আর মা তাতে গোবর মিশিয়ে সুন্দর ভাবে
নিকিয়ে দিতেন দেওয়াল!
ফুটে উঠতো খড়ির দাগ...
আর খসে পড়া চাঙড়ার মাঝে মনে হোত
আমি আমার ঈশ্বর
দেখছি আজন্ম কাল...
স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ!
অলংকরণ - অঞ্জন দাস
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
No comments:
Post a Comment