Thursday, 1 September 2022

কবিতা

চিক বর্ষা সোঁদা টুপ পর্ব-৭


অরুণ কুমার দাঁ এর কবিতা-




১.
∆ সিক্ত জমির গভীরতা ∆
     


বাসা বাঁধার কথা ভুলে গেছি -
এ তল্লাটে, এমন কোনো জমি নাই
যেখানে পোঁতা যায় শক্ত খুঁটি !

নরম মাটি, পা গেঁথে যায়
জলাভূমি ছিল হয়তো -
একটা দুর্গন্ধ ভেসে আসে ।

দু'টো কাক ছিঁড়ে খায়
মরা ইঁদুরের দেহ -
এর আগে এখানে আসেনি কেহ !

সারাজীবন একখন্ড শক্ত জমির জন্যে
শুধু ঘুরেছি
পূর্ব-পশ্চিম
উত্তর -দক্ষিণ

হাতের কঞ্চিতে মেপেছি
সিক্ত জমির গভীরতা ।



৩.
∆ প্লাবন ∆
        

আবরণ খুলে দেখ, টকটকে ক্ষত
ফুটে আছে তাঁরা, ঠিক তোমারই মত ।

নৈঃশব্দে হেঁটেছে যে দুটি পা
জোনাকির আলো ভেজা গাঁ।

গভীর তলদেশ থেকে উঠে আসে চাঁদ
আকাশে জ্যোৎস্না-প্লাবন-ভেঙেছে বাঁধ।

শিশির পতনে, অনিবার্য ঘাসের কাঁপন
সবকিছু মিলেমিশে, মহার্ঘ যাপন।



৩.
∆ গাছ বিষয়ক কাব্য ∆
        

অনেক গাছের মধ্যে
কিছু গাছ পরিচিত -
অপরিচিতও আছে কিছু  ।

কারো হাত ছুঁয়ে দেয় বৃষ্টি
বিষবৃক্ষের ছাল কারো গায়ে -
কারো শিকড়ে ঔষধি ।

গাছ বিষয়ক একটি কাব্য
লেখা হয় -
গাছেরই হৃৎপিণ্ডে !

ছবি:- নিশিপদ্ম
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

মানস চক্রবর্তী’র কবিতা-


১.
∆ অমলাদি ∆


#
বর্ষা এলো 
বৃষ্টিস্নাত হল কদম 
চিলেকোঠার ছাদে এলোকেশী হল অমলাদি 
নোলক পরল, দুল পরল, গলায় দিল হার 
ঘন নীল আঁচল উড়ল হাওয়ায় 
ভেজা চুলে আবৃত হল মুখ 
বৃষ্টি থৈ থৈ হল বুক 
অমলাদি নাচল, গান গাইল 
আর আকাশের দিকে তাকিয়ে উচ্চারণ করল, 
শিবম্, সুন্দরম্, আনন্দম্ | 
               
                     
#
অমলাদির একটি চাপা দুঃখ ছিল | অমলাদির ডাইরিতে দেখেছিলাম কয়েকটি লাইন - 
    আমি অনেকদিন দেখিনি গঙ্গা 
     পদ্মের মাথায় ভ্রমরের খেলা 
       দীঘিটির ধারে অবেলা | 
আমার অবেলাকে অবহেলা করে চলে গেলো | 
এখন আমার দিন অন্যদিন, শুধু সম্বলহীন | 

                         
#
অমলাদি হিন্দু | হিন্দু মতেই সৎকার হয়েছিল | তবুও অমলাদি কবর ভালোবাসত | আমি বলতাম, কেনো গো ? বলত, কবরের পাশে বসলে জীবন কী ঠিক ঠিক বুঝতে পারা যায় | মানুষ মোহহীন হয় | আনৃশংস্য হয় | ক্রোধ মরে যায় |  অন্তরে জাগে ঈশ্বরীয় ভাষা | আরো বলত, 
যে রাতে কবরের উপর ঝরবে জ্যোৎস্না 
ঝরবে শিউলি, শিশির 
সে রাতে মরণ থেকে জেগে উঠবে আর একটি আমি |
ছবি:- নিশিপদ্ম


••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
সুব্রত দেবনাথ এর কবিতা-


১.
∆ শর্ত ∆
 

একাকীত্বের প্রাচীন শর্ত নিঃসঙ্গতা ।
তাই সঙ্গ খুঁজি 
প্রেমের 
বন্ধুত্বের
আত্মীয়তার 
নিজেকে জাহির করি তাদের উপযুক্ত হবার,

সম্পর্কের ভেতরে গিয়ে দেখি 
সেখানেও শর্তের এক লম্বা পরচি
সে সমস্ত প্যারামিটারে নিজেকে উত্তীর্ণ করতে পারি না, 

আবার ফিরে আসি সটান 
অন্ধকার ঘরে
আবার একা, আবার একাকীত্ব আমাকে আঁকড়ে ধরে ।




২.
∆ আত্মবিলাপ ∆


ঝিনুকের মাঝে খুঁজে পাই মুক্তাহীন বেদনা
বারুদের স্তূপ ভিজে আছে অশ্রু জলে
নিজেকে হারাতে শুরু করেছি সমুদ্র সৈকতে 
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পায়ের পাতা 
মসৃণ রাস্তায় হোঁচট খায় মাইল ফলকে
ঘরের দরজা খোলা রেখে বাইরে তালা ঝুলিয়েছি,
চোর কে বলেছি খেয়াল রাখতে

নিজের হিংস্র সত্তা মাঝে মাঝে উৎপাত করে
অভুক্ত শিকারীর মতো ।




৩.
∆ কবর ∆


ধিরে ধিরে নিজের কবর সাজাই,
ঘুনে খাওয়া কাঠের আসবাব
আর পোড়া ইটের টুকরো দিয়ে 
                                    বানাই ঘর
ঘরের ভেতরে কবর, কবরের ভেতর 
একটি কালচিত্র 
নিরাপদ আশ্রয় খুঁজি বাঁচার তাগিদে 
একটি সাজানো গোছানো ব্যালকনি 
সকালে পূবের সূর্য 
বিকেলে দক্ষিণের বাতাস
উপভোগ করতে চাই
আরাম কেদারায় বসে সুরুত সুরুত
                                   চায়ের টান,
বাঁ হাতে সিগারেটের ছাই 

ভাবতে ভাবতে পৌঁছে গেছি একদিন
তুলসী ও ভগবত্ নিয়ে 
অপরিণত কবরের কাছে।

 ছবি:- নিশিপদ্ম

••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••



1 comment:

  1. ধন্যবাদ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কে

    ReplyDelete