পিয়াংকী’র মুক্ত গদ্য
সন্দেহ এবং একটি বিরল চন্দ্রগ্রহণ
প্রত্নতত্ত্ব আর গোলাপি বিকেল -- এই শিরোনামে গচ্ছিত আছে নিজস্ব জেহাদ। মুদ্রার দুই পিঠ পরস্পরের দিকে তর্জনী রেখে জানিয়েছে তাঁরা সঙ্গমরত । এই সময় 'বাবরের মাথার দাম কত' এ' প্রশ্ন খানিক বেহায়া।
অরক্ষিত প্রত্নস্থানে এখন ম্যানগ্রোভ। বাড়বাড়ন্ত বোঝে না ওরা, ফলত ছেঁড়া পাতাগুলোয় জমিয়েছে অসুখ। দিন খসে যেভাবে চান্দ্রমাস বিলাসী হয়, ঠিক সেভাবেই ওরা গুনে রাখে কড়ি। গলগ্রহ হলে কুলুঙ্গি থেকে নামিয়ে আনে তেজপাতাগাছ । থমকাই। দাঁড়াই। আদর দিয়ে ঢেকে নিই ঠোঁটের ওপরের অস্পষ্ট তিল। খারাপ লাগে না। ভয় হয় না। ব্রহ্ম আসেন। পুড়ে যাই।নড়ে বসি ফেরবার। ফেরৎ দিই গত হওয়া জন্ম।
অপ্রিয়'র পাশে দাঁড়াতে বুকের ঝাঁপ খুলতে হয়।খুলি।তেমন আর কীইবা কষ্ট, বড় কথা হল, না ভাবলে কষ্ট সাধারণ। তাকে আঘাত দিয়ে মোড়া বিলাসিতা। দিব্যময়ূর ডেকে যায় খাখা দুপুরে।কলাবনে আগুন লাগে। 'মরুক গে' বলে শিরচ্ছেদ করতে বিবেক কাঁপে, ফলত আগলাই।আগলানো কি জনসেবা? প্রশ্ন করি নিজেকে। ধারাপাত জুড়ে গুণের বৃষ্টি নামে। প্রিয়জনকে বলি, " গুণ বড্ড তাড়াহুড়ো দেয়, আমি বরং যোগ হই"? সে হাসে। তীব্রডাহুক এবং ডাকবজ্র উভয়ই বস্ত্রহরণ পর্বে এসে ঝুঁকে যায় গাছের দিকে। আদিম চুম্বন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে যে গাছ তার প্রতি অংশে বাংলা কবিতার বাদল দেখি। ঝিরিঝিরি শব্দ ভুগতে দেয়। বারবার মনে হয় এই ভোগাই ভবিতব্য। পিছল নাচঘরে থোপা থোপা কচুরিপানা। ওর বায়ু আছে, নিজের। যার স্বআয়োজন থাকে সে তো ধনী। এই যেমন বাংলা কবিতা, নিজস্ব নদী আছে তাঁর, গাছ আছে পাহাড়ও আছে। উভচরের ওজন নিয়ে আহ্লাদ হয়ে বেঁচে আছে সে। কৈফিয়ৎ নেই, পূর্ণচ্ছেদও না। ভিনিভিনি খুশবু। আরামদায়ক। কবিতা লিখে উল্লাস আর অনৃত দম্পতি, এ যেন দ্রাক্ষাক্ষেতের ভুল । বুঝি কিছু,কিছুর জন্য অপেক্ষা করতে করতে বাকি দুই-চতুর্থাংশও হয়তোবা একদিন...
নকল বড়শি এবং মাছমাছ খেলা। ডুবুরির কানে জল। পরমায়ু পেয়েছে যে আর্য তাঁর কপাল জুড়ে রাত সাড়ে তিনটের অরা। ছোট কাঁটা চারঘর ছুঁলেই রাজহাঁস ডাকবে, আমরা একসাথে আরেকটি বর্তমানের ঘোমটা তুলব।অপেক্ষা করি। সবিনয় নিবেদন বলে আজ যে শুরু করলাম একদিন তাই-ই প্রত্নতত্ত্ব হবে। কোনো এক গোলাপি বিকেলে খবর যাবে স্মৃতিখোর-এর ঘরে। এরই মাঝে সামান্য কিছু তুলে রাখা।
" তুমি দিয়েছিলে যে পদ্মবন
নাব্যতা ক্রমেই কমে আসছে
এখন দরকষাকষির সময়
যার যতটুকু আছে ,
ফতুর হবার আগে ঘোষণা করো সাম্যবাদ
বিপর্যয় আসে আচমকা
জলস্তর মাপার আগে তাই পিটিয়ে নিতে হয় নৌকার তক্তা
নদীজন্ম দিয়েছ বলেই এখনো আতসকাচে আয়ুরেখাদের বাড়বাড়ন্ত
ফুসমন্তরে উধাও করেছ যাবতীয় অভাব হায়রোগ্লিফিকে তাই পদ্মবন
রোহিণী নক্ষত্রে অবাধ্যসন্ধ্যা
নাব্যতাকে ব্যবহার করেছে যারা --
তারা জানে না
যজ্ঞকুণ্ড হল সাপের খোলসের গায়ে ঈশ্বরীর অবিন্যস্ত ঘুম "
(স্বরচিত)
-- ওপারে যুবতী। ক্ষুদ্রস্তন। কুন্দবোঁটায় গনতন্ত্রের নিমফল। তাঁকে সন্দেহ করে কিনে এনেছি বাংলা কবিতার কিছু উচ্ছিষ্ট সুখ। আমি এঁটোতেই সুখী বলে যারা যারা সাহসী হয়েছেন তাঁদের প্রত্যেকে চোখে সেই যুবতী পেয়েছে নিখুঁত অ্যারিথমেটিক।
' অকারণ অমাবস্যার দিকে ' ধেয়ে গেছে ঈষৎ পোয়াতি কবিতার শুক্রাণু। অক্ষতযোনি পার হতে গেলে 'মধ্যযামের আলো'তে গোটাতে হয় লাটাই। অত:পর ' ভাঙা চশমায় জোনাকি' সমেত বিক্রি হয় লজ্জাবনের ঋতপ্রেম।
চুরাশিলক্ষ সন্দেহের পর একটি বিরল চন্দ্রগ্রহণ। অসহায় জাতক-জাতিকার গন্ধ নাও বাংলা কবিতা। তুমি ঘনিষ্ঠ ছিলে বলে পড়া হয়নি সরিসৃপের বংশবিস্তার। তিনহাত সংস্থান রেখে এইমুহূর্তে 'এসো ছুঁয়ে দাও নিরাময় '...
ছবি- মেহবুব গায়েন
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
No comments:
Post a Comment