কবি জগন্নাথ চ্যাটার্জী’র কবিতা-
১।। ∆ অসুর কথা ৯ ∆
পরিধি ছোটো হতে হতে নিখোঁজ হয় ব্যাসার্ধ।
বৃত্তের মাথায় বিসমার্ক, নিজের হাতে ঠিক করে দেয় সম্পর্কের গাঢ়ত্ব
আদিম ছিটেবেড়াতেই বেজে ওঠে ধামসা, সেজে ওঠে সময় সংসার এবং আমি।
বৃত্তের মাথায় বিসমার্ক, নিজের হাতে ঠিক করে দেয় সম্পর্কের গাঢ়ত্ব
আদিম ছিটেবেড়াতেই বেজে ওঠে ধামসা, সেজে ওঠে সময় সংসার এবং আমি।
২।। ∆ মায়াবি ডাস্টবিন ∆
কোনো দিন ডাস্টবিনের ধার দিয়ে হেঁটেছো?
ডাস্টবিন এক মায়াবাক্স,গমগমে ইনস্ট্রুমেন্ট, ওখানে মালা গাঁথার স্বপ্ন ফেরি হয়। টিনের দেওয়ালে পারিজাত অরন্যের নিভৃত সঙ্গম, কামধেনু শবলার ভরা সংসার।
এখানে চাঁদ ওঠে সারাদিন, এ চাঁদ পশ্চিম দেখে না, ঘুর্নন বোঝে না। এখানে আকাশের রং একঘেঁয়ে নীল না, বরং অনেকটাই সাদা বা ধূসর,
বা সমস্ত রঙের হিজিবিজি,
এখানে শুধুই 'পাতিয়ালা' শরৎ আর 'মারওয়ারি'' বসন্ত। মৃদু রোদে 'খুশি' ঘাম এলিয়ে শুয়ে থাকে হাসনুহানার পাহাড়ায়। নরম বাতাসে পাখনা মেলে নিরুত্তাপ অভিধান।
অথবা 'কোড নেপোলিয়ান'।
ডাস্টবিনের পাশ দিয়ে হাঁটো মালিক...
সেখানে টুকরো টুকরো বৈদুর্য্যরা অপেক্ষা করে, আলবাত করে। বৈদুর্য্যরা পেশাদার, শেয়ার সূচকের ওঠানামা, জিডিপির বাড়বাড়ন্ত, লিবিয়া, সিরিয়া, ওয়ালস্ট্রিট সব বোঝে। তবুও সেই কালি-ঝুলি ঘাঁটা হাতে বা সিগনালে চ্যাপ্টা হওয়া পেটে যোগনিদ্রায় নিদ্রিত।
ডাস্টবিনের দেওয়ালে কান রেখেছো কোনোদিন?
"পাশাক্ষমালিকাম্বজ পদ্মা পদ্মালয়ে শোভে" শুনতে পাবেই...
ডাস্টবিনে চাঁদ ওঠে... ডাস্টবিনে চাঁদ উঠবেই...
মায়াবাক্সে জমা থাকা বৈর্দুয্যের গায়ে একটা করে চাঁদ গাঁথা থাকে...
ডাস্টবিন দেখেছো?
এখানে পৌরুষ আর কবজ পরস্পর সমান্তরাল।
৩।। ∆ অসুর কথা ৪ ∆
বিকালে মরা পালকের সাথে নেমে এল বৃষ্টি।
অগুন্তি ফোঁটার সাথে একটু আমি মিশেছিলাম।
অকাল সন্ধ্যা নামানো চুলে হারানোর আগে, আমাকে ভরে নিল উন্মুক্ত ঠোঁট।
মৌচাকে মৌমাছি হিংসেয় আত্মহত্যার কথা ভেবেছিল বেশ কয়েক বার ।
তোকে ছুঁয়ে বৃষ্টি মদমত্ত হস্তি যুথ। সাথে আমিও।
এখন তুই তৈগা।
সমস্ত উপত্যকা এখন অনাবৃত। দিনের মত দাড়িয়ে আছে বিভাজিকা, ঝর্ণা হয়ে বয়ে চলছে বৃষ্টি অথবা আমি।
বস্তুত হরিণ আর আমি এখন অভেদ।
গভীর গিরিপথ পেরিয়ে গ্রস্ত উপত্যকা।
বৃষ্টি বুঝল,
কেন বিশ্বমিত্র,
কেন উর্বশি,
কেন শুকুন্তলা।
বাষ্প হল। হলাম।
দীর্ঘ সংগ্রাম শেষে লিভিংস্টোন বাড়ি ফিরল।
চাঁদ উঠল। পাখি ডাকল। মৌ জমল আবার।
আমি তোকে দেখলাম।
৪।। ∆ অসুর কথা ৮ ∆
ফাগুনের মাঝামাঝি, পলাশ -শিমুল- অশোক এখন মতাল বেহেড।পাহাড়ি ঝোরার মত তরুণীর খোলা পিঠে ইমন - মল্লারের ঢুঁ ।
যদিও এসবে অভিজ্ঞান খুঁজে পায়না কোনো নির্মেদ নাভিদেশ।
কেবলই একটা দাউ দাউ -এ ঝলসাচ্ছে রোজ। যেন দম পাচ্ছে না, যেন প্রসবের অপেক্ষায় দিনগোনা শিশু, যেন নেফারতিতির মুকুটচ্যুত ঝুটা মুক্ত,
যেন পূর্ণিয়ার খুপরিতে থাকা সেই মালা।
অথচ কথা ছিল না এমনটা হওয়ার। চেয়েছিল সেগুন মঞ্জুরি ও তাতে লেখা কয়েকটি প্রেম।
আর বাতাসের ফোঁপসে গাঁথা শান্তিনিকেতন ।
কিন্ত ভাত এক করালবদনা ভৈরবী। কোন এক মন্ত্রবলে কেড়ে নিল দুইমলাট, কলম ও রাজকুমারি ।
প্রতিরাতে খুন হয় সমস্ত যাপন।
অভিজ্ঞান এখন স্পষ্টদেখে যে পাহাড় -পাথরেরই জাবেদামাত্র, কোনো ষোড়শীর খোলা বুক না।
প্রেমিকার চোখ কেবলই রক্তের ঢেলা,
আর নেফারতিতি?
কঙ্কাল ছাড়া কিচ্ছু না।
৫।। ∆ ইতি প্রেম ∆
এক নদীপথ পেরিয়ে হেঁটেই চলেছি। ঘর ঘর খেলায় আমি বড্ড বেমানান--- মালিক। শুরুর আগেই শেষ হয়ে যায় সমস্ত বাকল।
এই চুন সুড়কির দেওয়ালে আমি তোর ঠোঁট আঁকতে পারি না, কানের লতির কাছে ঘুম জমা করার আগেই ফিকে হয়ে আসে সময়। এ মুদুনি চাল আমাকে গিলতে আসে, ছিঁড়ে খায় আদিম পৌরুষ।
কুলুঙ্গিময় বিষের বোতলে রোগা প্রেম - সূর্যাস্তের অপেক্ষায়।
কেঁদে ফেরে অস্তরাগ ও আবেশ ।
তোর শরীরে আস্তানার বদলে খুঁজে পাই পথ। যেখানে হাঁটুল মাটুল দিয়ে বসে থাকে গার্হস্ত্য ঘুম। এলানো চুলে বারবার কেঁপে ওঠে বানপ্রস্হ।
এপথে আমি একাই। বিভাজিকার গলিপথে হিমশৈল , গিরিপথে অতীন্দ্র পাহাড়ায় দুই শো ছয় অক্ষৌহিণী সেনা। গুপ্ত ছোরার ডগায় লেখা আমার নাম।
মালিক, এই পথে আলাদা যাপন আছে- ফিনিক্স আছে, ফুলদানি ভরা ডুুমুর ফুল আছে।
শুধু অস্তাচলের দিনে আমিত্ব ক্ষয়ের হিসেব নেই/ তুই ছাড়া আমার কোনো নদীও নেই।
অলংকরণ - অঞ্জন দাস
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
ReplyDelete" কিন্ত ভাত এক করালবদনা ভৈরবী। কোন এক মন্ত্রবলে কেড়ে নিল দুইমলাট, কলম ও রাজকুমারি ।" জগন্নাথ কিন্তু বাংলা কবিতায় দুটো হাত নিয়েই এসেছে । কোনো বাধ্যবাধকতাই তার কাছে বিজয়ী হবে না ।
সব কটা কবিতা খুব সুন্দর তবে 'ইতি প্রেম' কবিতাটা বেশি ভালো লাগলো ।😊শুভেচ্ছা জানাই
ReplyDelete