কবি তন্ময় মন্ডলের কবিতা -
১।। অন্ধকারের চোখ
একটা দলাপাকানো কষ্ট পেন্ডুলামের মত দোল খাচ্ছে
হৃদপিণ্ডের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে।
আলো নিভে আসছে শহরের।
এগারোটা চল্লিশ।
শেষ ট্রেন।
আমি উইন্ডো সিটে শূন্যতার উত্তাপ নিচ্ছি।
আজ নিজের ভেতরটা খুড়বো।
অতলান্ত গভীর অবধি পৌঁছে দেখতে চাই
হৃদয়ের অন্ধকার কতটা গাঢ় হলে
মায়ের মুখ ঝাপসা দেখায়।
কতটা অন্ধকার আমার নিরপেক্ষ বান্ধবীকে শয়তানের মন্ত্র পড়ায়।
আমি বিষাদের ভাষা শিখিনি,
শিখিনি মুখ বুজে মেনে নিতে প্রত্নতাত্ত্বিক পাপ।
অন্ধকার খুড়ে খুড়ে তার চোখে আমি চোখ রাখবোই,
যে চোখ আমাকে আলোর মত করে অন্ধকারের সমীকরণ শেখাতে চায়।
২।। মিছিলের লেজ
মিছিলের লেজের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকেছ কখনও?
আমি দেখেছি দিনের পর দিন,
মাসের পর মাস,
বছরের পর বছর
শতশত মিছিলের আলো ধরে এগোনো টলমলে পা...
অবিন্যস্ত সেসব পা আসলে এক একটা গাছ, অথচ
যাদের শিকড়ই নেই।
তবু জীবন আছে,
জীবনধারণের তাগিদ আছে।
বিশ্বাস আছে, তবে দৃঢ় নয়।
এ-গলি থেকে ও-গলিতে যখন হারিয়ে যায়
একের পর এক মিছিলের লেজ,
আমি বেশ বুঝতে পারি
বিশ্বাসের সাথে পেটের,
আর পেটের সাথে মিছিলের কোথাও যেন যোগসূত্র আছে।
৩।। ঘৃণা
মদের গ্লাসের তলায়
যতটুকু আলো আমি চাপা দিয়ে রাখি রোজ,
তার ভেতরও একটা তুমি আছো।
যার প্রতি কোনও ক্ষোভ নেই।
অবিশ্বাস নেই। বিশ্বাসঘাতকতার প্রতিহিংসা নেই।
গ্লাসের নীচে আমি চাপা দিয়ে রাখি একটা কোমল আলো।
তোমার আপেলরঙা মুখ। জলের ফোটা লেগে থাকা কানের লতি।
তাই আমি কখনও মদের গ্লাসের তলায় দেখিনি। পাছে ঘৃণা কমে যায়।
৪।। একটা তীব্র দহন আর একটা নদীর পাড়
ক্রমশ একা হয়ে পড়ছি আরো।
আমার অভ্যাসের শিকড় থেকে
তোমাকে উৎখাত করতে পারছি না কিছুতেই।
অথচ গ্রহণ করার উপায়ও যে নেই।
প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ, চিৎকার,
কোলাহলের অন্তরালেও আমি তীব্রতর একাকিত্বে ভুগছি।
তোমায় সমগ্র জাগতিক চেতনা থেকে উপড়ে ফেলার পরও,
স্মৃতির অন্তরীক্ষ বশে আসছে না কিছুতেই।
তুমি আরও ঘৃণা দাও।
তীব্র আগুনে পুড়িয়ে দাও অপ্রয়োজনীয় স্মৃতি।
তারপর,
কেউ আমায় নিয়ে যাক আমার গ্রামে।
কতদিন বেতনী নদীর পাড়ে বসিনি,
যন্ত্রণাদের ঘনীভূত হয়ে নদীতে মিশতে দেখিনি, মরা রোদের গোধূলিতে।
আর কোনও আবদার নেই, চাওয়া নেই।
শুধু এটুকুই...
একটা তীব্র দহন আর একটা নদীর পাড়…
৫।। চুমু
আজকাল সময়কে মনে হয় আস্ত পেঁয়াজ।
খোলস ছাড়াতে ছাড়াতে যত ধূসর হয়ে যায় যাবতীয় পাপ, যাবতীয় শোক
ততই অচেনা মানুষ স্পষ্ট হয়,
ফিকে হয় কতশত প্রিয়জন।
সব সম্পর্কেরই মেয়াদ ফুরোয় একদিন।
শিকলগুলো আলগা হয়ে যায় অজান্তেই...
যদিও পৃথিবীতে রাস্তার মতো রাস্তা থাকে, মানুষের মতো মানুষ, চোখের মত চোখ, ঠোঁটের মতো ঠোঁট...
সব ভুলে যাবে জানি,
আমিও ধীরে ধীরে সেলাই করে নেব চার টুকরো হৃদপিণ্ড।
তবু,
কাউকে গভীরভাবে চুমু খেতে গেলে
তোমায় মনে পড়বে জানি।
অলংকরণ - অতীশ কুন্ডু
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
No comments:
Post a Comment