Friday, 17 July 2020

কবিতা

শাপলা পর্ব - ২

কবি কাজরী বসু এর লেখা-



১।  পালঙের একাল সেকাল


সবটাই জানা হয়ে গেছে
তরতাজা কচি পালং
তুমি স্নানঘরে মিনিট দশেক 
সত্যান্বেষণে লিপস্টিকের অচেনা ব্র্যান্ড 
হোয়াটসঅ্যাপে সবুজ পালঙের প্রোফাইল

একত্রে হাঁটতে হাঁটতে রেললাইনের ধারে
সব কথা কাটা পড়ে যায় চলন্ত জনশতাব্দীর নীচে
মুঠোফোনে নীলাঞ্জনছায়া
বেজে বেজে থেমে যাওয়ার মানে খুব সহজ
আমি মুখে হাসি মেখে মেখে হাত ধরি
তাপ খুঁজি না

পরের সপ্তাহে সেমিনার 
নারীমুক্তি আন্দোলনের জ্বালাময়ী ভাষণ ভাবতে থাকি
আর ফেসবুকের গরমাগরম স্টেটাস
আমার লেখার প্রধান বিষয়
পিছিয়ে পড়া পরিবারের অত্যাচারিত মেয়েরা 

অন্তর্লীন জোছনায় ডুবে যায় চরাচর
তাজাপ্রতিম হতে থাকি
ফ্রিজে রেখে দেওয়া শাকসবজির মতো 
আমি জানি পচন ধরেছে ভিতরে
তবু বরফের আর থার্মোস্ট্যাটের ভরসায় ধুঁকতে থাকা

কচি পালং বড়ো সুন্দর
জানতে দিইনি ,দিইনা ,

আমি জানি
ফ্রিজে রাখা বিগতযৌবন শাকসবজি 
বিকোয় না আর
নিরাশ্রয় ভবঘুরে



২।  কাদাজল



জানালা জানালো মেঘেরা এসেছে কাছে
দু চোখ লাফিয়ে ওদিকেই গেছে ছুটে
খালি চোখে দেখি সাজোসাজো রবে ওরা
ফেসবুকে তবু মেঘরং ব্যাকফুটে।

ভুল জানা ছিল,রঙ মানে শুধু প্যাস্টেল
লাল মানে শুধু হাঁটু ছড়ে যাওয়া রক্ত
বেল মানে শুধু মাঝে রিসেসের ঘণ্টি 
ব্ল্যাকবোর্ড সাদা করে ক্লাসঘরে চক তো!

রঙেদেরও আছে এলাকা এলাকা খেলা
সে কথা বুঝিনি, বুঝিনা এখনো বেশি
না জানা গন্ধ লেবুপাতা রাখে ঢেকে
লেবুতে ফেবুতে কবে থেকে রেষারেষি!

জানা ও অজানা ডিবেটের প্রতিপক্ষ।
সত্যি মিথ্যে ভাবলে সময় নষ্ট
মুখোশেরা আদি অন্ত এভাবে তৈরি
তুমি আমি কেন করে যাব নীল কষ্ট!

লেবুপাতা জানে রাতেই গন্ধ বাড়ে।
সকালের মেঘ জানেনা,ক্ষতি কি তাতে!
ফেসবুক আজ লেবুপাতা ঘ্রাণ নেবে!
অথবা ঝাঁঝালো গন্ধে মাতবে রাতে!

সবই জেনে গেলে নিহত হবে  বিতর্ক।
মুখোশ কিভাবে জানাবে সে সর্বজ্ঞ!
অথচ সময় লাফিয়ে লাফিয়ে ছুটবে
বাদ থেকে যাবে কালো ধোঁয়া ওঠা যজ্ঞ!

জানালা খুলব ভেবে ফেসবুক খোলা।
জলে ও কাদায় সবটা গুলিয়ে যাবে
লেবু খুঁজে খুঁজে বাঘা তেঁতুলের দেখা
পেলে আর কবে ভালোবাসা খুঁজে পাবে?



৩।  আঁচ


সাতসকাল। এক নদীর জলশোধন।
রাতসোহাগীর ছিন্ন পোশাক ভাতকাপড়।
লজ্জারুণ। দুর্নিবার দুর্যোধন।
গোপন রাখা নীল গরিমার চড়চাপড়।

সব মুছে এক সকালশোভন চায়ের কাপ।
এক চামচ। দুধ -চিনির মিশ্রণে।
শাড়ির ভাঁজে সাবান ঘষা তুমুল পাপ।
এক ফোঁটা। মেঘ বিয়োয় নির্জনে।

দই ইলিশ। কামরাঙা সুখ শেষপাতে।
বিষাদরঙের ফ্লোরাল তাজা শ্বাস, ডিও।
লোডশেডিং। সময় খুব কম হাতে।
ভুল না বুঝে আজকে রাতে শোধ নিও।

সব ভুলে এক আঙুল ছুঁয়ে ট্যাক্সি অ্যাপ।
নীল ছাতা। সানগ্লাসের সবুজ কাচ।
দূরত্বের এক যোগবিয়োগে মিটছে গ্যাপ।
সমঝোতা। যাপনক্রম, চুল্লি, আঁচ.....



৪।  পরিণত পাপ


প্রথমেই লিপিবদ্ধ করে যাই শোক
প্রাণ খোঁজবার কিছু আগে
রেখে যাই স্তূপাকার গর্ভনিরোধক

খুঁজে যাই বিপন্ন শোণিতের দাগে
আমৃত্যু মৃত্যুযোনিপথ

যে ফোঁটায় গেলা যায় অনন্ত ঢোঁক
সংক্ষেপে গিলেছি শপথ

নদীজল লিখে যাই মৃতকল্প যে অভিধানে
শব্দেরা সেখানেই পালক খুলেছে অনুমানে

প্রথমেই লিখে রাখি তৃষিত বিলাপ....
হেঁটে যাই,
বেকসুর খালাসেই তুমি আছ,আমি আছি
আর আছে পরিণত পাপ...



৫।  স্বতঃসিদ্ধ


ধনুকে টানটান  ছিলাতে অনুমান লুকোনো হেমলক লিপ্ত
হননে লাগাতার তেমনই সমাচার জীবন তথাপি প্রদীপ্ত...

তাই আকাশে ভোরে রোদেলা স্বাক্ষরে লিখিত শপথের সঙ্গে
নীলাভ ক্যানভাসে এসেছে অনায়াসে উড়ানও সেই অনুষঙ্গে

করেনি বিদ্ধ সে ধনুকও অবশেষে, সে বিষও গোপনে একান্ত
তা অণুবীক্ষণে দেখা, বোঝা সে ক্ষণে কত সঠিক,কত ভ্রান্ত..

আগামী কোনো বাঁকে যে কথা লেখা থাকে লেখনী -নিঃসৃত  তরলে
বোঝা তো হতে পারে ভরেছে চুপিসারে কত সুধাতে কত গরলে..

অমৃত মেখে তীর যদি প্রয়াসে স্থির যদি বা করে তবু বিদ্ধ
থাকে না কিছু ধার সে যে ভালোবাসার,এমনই কিছু স্বতঃসিদ্ধ..



অলংকরণ - অঞ্জন দাস

::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::

No comments:

Post a Comment