শাপলা পর্ব - ২
১। কেয়া
দূরের বাতাস বয়ে আনে কেয়ার সৌরভ
কেয়া কোথায় ফুটেছিল--- গোলাপনগরে,
না আহিরীটোলায়?
শব্দের শবগুলি জেগে ওঠে, প্রশ্নের বিহিত
চায়। সূত্রধর, যাও দেখি যমুনাপুলিনে!
ক্ষণজীবনের এই লিপি---
ফুলের কাছে যাই ছদ্ম-প্রজাপতি,
পাঠের অশেষ থেকে মুখ তুলে
শেষে এমন ঘিরেছে
কাল হল, কালো হল, কালি হল।
কিছুই বলে না কেয়া,--- মুহূর্তদীপ
কবে নিভে গেছে!
২। ঘাসফড়িঙ
তোমাকে এখন একটা ঘাসফড়িঙ ছাড়া কিচ্ছু মনে হয় না আমার
ঘাসফড়িঙ ছাড়া আমাকেও আজ আর কিছুই মনে হয় না তোমার
সময়ের দীর্ঘ লাফ সেরে চলো যাই বর্ণবিলোপনে
সবুজ বর্ষাদিনে, ঘাসের জাজিমে---
আকাশ প্রত্ন হয়ে আছে বিলীনময় শোভা জলে, প্রান্তরের বাতাসে...
সেইসব শালিকের কাছে যাই চলো চিরকাল যারা প্রাকৃতে অন্ধ।
জন্মেছি অগ্নির বিষুবে,
না-হয় লণ্ঠনের প্রবীণ শিখায় পুড়ে যাব!
৩। সূর্যের পথে
সূর্যের পথে চলো যাই--- এ-কথা সূর্য শুনেছে
পাঠিয়েছে বৃক্ষের কাছে, পুড়ে যেতে হরিত-আগুনে।
অগ্নি বায়ুর মতো আমরাও তবে নাকি!
চোখের পল্লবের ওঠা-নামায়
সমুদ্রের বিশাল পাখি ডেকে ওঠে।
সূর্যের পথে চ'লে অবশেষে আমি পেয়েছি তোমাকে
সুদূর আকাশে নয়, এই পৃথিবীরই অগ্নির ভিতরে জলজ সংগীতে।
এ শরীরে সূর্যেরা থাকে।
তারপর উঠেছি জেগে, মাতৃসাধিকার মতো রণাঙ্গনে
বাঁচিয়ে তুলেছি পিতা ও ভাইদের শব,
দেখে ফেলে সূর্যের শৈশব!
৪। নরকে এসেছি নেমে
স্বর্গের পথ ছিল একার,
তাই নরকে এসেছি নেমে।
এখানে বেদনার কোনো শ্রী ও জাত নেই
ক্রীড়াশেষের জয় নেই বার্তা নেই হ্রেষা নেই
কমলানেবুর দিনে ফুল্ল স্মৃতির হাহাকার নেই
নেই পোষা কষ্টের লোভ চতুরতা বিবিধ হারেমে।
এখানে দুঃশব্দের সন্ধির খোঁজে কেটেছে বারো মাস
রক্তাভ ফুলে ছাওয়া নিঃস্বপ্নের শীতার্ত আবাস!
ডাইনের মতো শত্রুকে ভালোবেসে ছুড়ে দিই
অফুরন্ত গোলাপ ও মদিরা, যৌথ গানের কলি...
তোমাকেই বলি: নৃমুণ্ডের শাসন ভালো, হে তথাগত,
ফিরে যাও, নরক নরক থাক দুজনের প্রেমে।
৫। স্মৃতিবেলা
নিজেকে কৃশ ভেবে ঢোলা জামা কখনো কিনিনি
সুবেশা তরুণী জানে ফুটপাত মুগ্ধ হয় ভিড়ে
ঘোরাফেরা, সান্ধ্য বিকিকিনি... ভাষা ছিঁড়ে যায়
নিজেকে সেলাই করি রোজ হই ভাষাবাদী
কনুইপ্রতিভাকে ঠেলে পার করি সবজি ও ফুলের সরণি...
মুঠোর ভিতরে ফুল কষ্ট পায় জানি, এ হাতের পল্লবে
তবু তারা কখনো ফোটে না। ঢোলা জামা খোঁজে।
ফুলেরা চতুরমতি, মৃত্যুকালে এসে ঠিক ছোঁবে!
অলংকরণ - অমৃতা নায়ক
No comments:
Post a Comment