কবি মনোনীতা চক্রবর্তী এর কবিতা-
১। পথের শেষ কোথায়..'
পাশ কাটিয়ে যেভাবে চলে যায় মেঘ, সেভাবেই পালক-জন্ম ডানা মেলে উড়ে গেল বুকের উপর দিয়ে
হাওয়া নরম হলে ব্যবহৃত হয়
বেনামী চিঠি অথবা সংলাপ
পড়ে থাকে শুধু বাসি গন্ধ
একদিন প্রতিদিন হয়
ঠিক যেমন প্রতিদিন হয় একদিন।
তেমনই এক ভুল দাগ অসংখ্য দাগ এঁকেছিল।
অসংখ্য দাগ থেকে একটা ল্যাদ খাওয়া দুপুর
ঢুকে পড়ে হামাগুড়ি দিয়ে অন্দরমহলে।
প্রয়োজন শেষে জ্বলে ওঠে বাতিস্তম্ভ
ম'ম' করে নতুন রঙের গন্ধ।
দেওয়াল থেকে ফিনকি দিয়ে বেরোয় মৃত্যুদণ্ড
গালিব আড়াল হলে খুলে যায়
কাঙাল-হাত ও পথ...
২। আবহ-সঙ্গীত
অনুভূতি হারিয়ে গেলে শব্দের কোষে পক্ষাঘাত কবিতার আড্ডা সাজায়।
ম্যান্ডুলিনের মতো বেজে ওঠে সময়। ঘাম জমে কেবল। আসলে কপাল-চিবুক রুমালের স্পর্শ চায়।
একসঙ্গে অনেকগুলো গাড়ির হর্ন বেজে ওঠে। থেমেও যায়।
শব্দেরা স্থির চোখে ল্যাপটপে ইচ্ছেদের হাঁটায়।কথা বলায়। আসলে, সেই সব কথা তারই। বলা হয়ে ওঠেনি। সুর কেবল ওঠে-নামে। ম্যান্ডুলিন কথার পিঠে সওয়ার হয়ে আক্রান্ত প্রায় মৃত কোষে রেখে যায় বেঁচে ওঠার থেরাপি...
৩। দেশ
দেশ রাগে একটা বর্ণহীন রোদ
জেগে ওঠে যেভাবে, সেভাবে তোমার পায়ের কাছে বসে লিখি সমস্ত কাঙালপনার গোপন কথা।
আজ সারা বাড়ি জেনে গেল
তোমার উদ্ধত যাবতীয়।
দেশরাগে যেভাবে ঘুমিয়ে পড়ে আমাদের
ভালোবাসার সন্তান। যেভাবে ও-ই শুরু থেকে শেষ অবধি লেপটে থাকে লতানো গাছাটার মতো, সেভাবে আজও তোমার বুকের ওপর মাথা রেখে
লিখে যাই ছিঁড়ে-ছিঁড়ে যাওয়া।
জল ভেঙে যাওয়া গর্ভস্থ শুষ্ক সন্তানের
বেঁচে থাকার সব রঙিন কথা…
চোখ বুঝলেই রাগ দেশ
চোখ খুললেই রাগ দেশ
৪। কার্ডিগান এবং ভুল প্রুফ
এক-একটি ভুল বানানের মতো
ক্ষয় নেমে আসছে ওপর থেকে।
একটা রাত্রি যেভাবে অন্য আর-এক রাত্রির কোলে স্বপ্ন রেখে হারিয়ে যায়। যেভাবে ত্রয়োদশীর চাঁদ হেমন্তের বাগানে ঘুম রাখে প্রিয়তম বুকে, সেভাবেই একটা নাগরিক ডানা গোপনে রেখে যায় জন্মগন্ধ।
গর্ভহত্যার কথা কে-ই-বা লিখে রাখে
অথচ হেমন্ত শুধুই জন্মের প্রিয়তম হলুদ নয়।
বয়ে যাওয়া রক্তগুলো ধানের ফিরে যাওয়ার কথা বলতে-বলতে কখন যেন হলুদ হয়ে উঠলো, সে নিজেও টের পায়নি!
হেমন্ত মানে কুচিকুচি শীত,ভাঁজ-ভাঁজ আলো আর ওয়াইন কালারের কার্ডিগান এবং টারকোয়িস-ব্লু কন্টাক্ট লেন্স আর সমবেত কণ্ঠ...
হেমন্তের গানগুলো কী অদ্ভুতভাবে আচমকা ভাতের গন্ধ হয়ে উঠলো; সমস্ত সেমিকোলন কবিতার বইয়ের কাছে এসে থমকে দাঁড়ালো...
এভাবেই হেমন্ত, লক্ষ্মীমন্ত হেমন্ত জন্ম-মৃত্যু বেঁধে ফেলে
আকাঙ্ক্ষার ভাতগন্ধে...
এক-একটি ভুল বানান ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
সরে থেকো, দূরে থেকো।
যাবতীয় ক্ষয় এখন মগ্ন ভাতের নেশায়
যাও; যাও...
শুধু ভালোবাসার একটি অক্ষর
রেখে যেয়ো যাবার আগে...
৫। ভাস্কর্য
ঢেউ ছিঁড়ে গেলে পড়ে থাকে মোচড়ের দাগ
ফিরে আসা চিঠির ভেতর
ঘুমন্ত মনকেমন ধ্যানস্থ পাখির
চোখের মতো লেগে আছে...
দরজার পাশে কে-যেন আজও দাঁড়িয়ে থাকে।
নিয়মিত পিষে যাওয়া স্মৃতির সাথে
হান্ড্রেড-পাইপার্স আর আমি।
কতগুলো ক্লিপিং... 'এখনও আছে রজনী'
কেউ তো কখনও ছিল না আদৌ।
দরজার ছিটকিনির আওয়াজে ভীমরুলের চাক গা-ঝাড়া দেয় যথারীতি।
ফিরে আসা চিঠি জানে, পাখির চোখের মানে
স্তব্ধ আলোর পাশে কী-করে
অগণিত রাত্রি আঁকা যায়,তা-ও।
পাখিটা ধ্যানস্থ ছিল না।
কেউ বা কারা যেন উপড়ে নিয়েছে
ওর চোখ দুটো।
পাশে দুটো কাটা হাত।
পাখিটা ঘুমোয় না কখনও...
অলংকরণ - মেহবুব গায়েন
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
No comments:
Post a Comment