Thursday, 13 August 2020

কবিতা

শাপলা পর্ব-১৩

কবি মানবেন্দ্র পাত্র’র কবিতা-





১।।  ∆ খনন ∆



১. 
ধীরপায়ে এগিয়ে আসে কুচকাওয়াজ
ক্রীতদাস অন্ধকার আটকে থাকে
মশারিতে,আলনায়

আমি চাদর জড়িয়ে পরোয়ানা হাতে
দু-দিকে তাকাই
রাস্তা পেরোই।

তোমার ফ্যালনা ঘরদোর মুছে যেতে থাকে।

২.
নচিকেতা এবার জানিয়ে যাবে আমন্ত্রণ

এ-সময় ভিক্ষাপাত্র হাতে বুদ্ধের ওই ছবি 
যত্ন করে টাঙিয়ে রাখো দেয়ালে

নিজেকে খুঁজতে খুঁজতে
শুধু
" উত্তিষ্ঠিত জাগ্রত...."

৩.       
কেউ খিদে নিয়ে শুতে গেলে
 অট্টালিকার সর্বোচ্চতলে বীণা বাজে

আমরা সামাজিক তো? 
এ পরিচয় ভালো জানে কাকেরাই।

আমরা সুযোগসন্ধানী
শুধু মাটি খুঁড়ি! 





২।।    ∆ সমর্পণ ∆
              


মেঘ ভাঙে সারারাত পথে পথে ভিজি
উলঙ্গ মাঠের মাঝে বসে থাকে ঈশ্বর এক
খিদে পায় অচেনা বৃত্তে তাই বারবার ঘুরি
কলিঙ্গ নগর খুঁজি, বোধি বৃক্ষের সমাবেশ।

কবে থেকে মাখছি ধুলা শরীরে শরীরে
আকাল পার করা বুড়ো নিম গাছ  --
জেগে থাকে সারাক্ষন বুকের ভেতরে
জ্বর এসে এঁকে যায় রাতের কোলাজ

জেগে আছি ঊজ্জয়ীনি মগধের পথ
গভীর রাতের চাঁদ মাথার ওপর
টেরাকোটা মায়ামুখ কিছুটা শপথে
আমাকেও ডেকে যায় কুয়াশার ভোর

এরকম অঙ্গীকার ! পাথর বসানো দু চোখ
ভেবেছি ঈশ্বর বুঝি ঈশ্বরীও হতে পারে
আমারতো নেই আর দেবার একটুও শোক
নিঃশ্বাস টুকু ছাড়া সব কিছু তোমার দুয়ারে ।




৩।।   ∆ বসন্ত ∆
 


অনেক রাতের পর আজ মধুরাত
নিকোটিনহীন

কৃষ্ণচুড়া হোক কিংবা রাধাচুড়া
টিউলিপ কিংবা রডোডেনড্রন
মিলে মিশে যাবার প্রত্যাশা

অথচ
ঢুকে পড়ছি ম্যানহোল
ফুটপাথ শিখিয়ে দিচ্ছে স্যাডো
গতিপ্রকৃতি,  কামু - কাফকা
ক 'অক্ষর ভুলে যাচ্ছি আর রক্ত মাংসময় পৃথিবী যন্ত্রনায় নীল হতে হতে
ভেসে যাচ্ছেন 

কসাইখানায় বসন্ত আসেনা বোধহয় !




৪।।  ∆ ঋতু ∆



কে আর জেনেছে পূর্ণ - নিটোল তাকে
যে এখন প্রাচীন মাটিতে শুয়ে শুয়ে 
বেহালা বাজায়!
এক জোড়া হাঁসের কালোজল চোখ
এক মনে আমাকে দেখেছে খুব।

সহচর-সহচরি তারা
মিলিয়ে মিলিয়ে সেই সব আশাপ্রদ রাগে 
উষ্ণতায় বেজেছে
আর
খতম করেছে শীত
রাতের পিপাসা...

আজকেও ম্যাজিক মেমেন্ট এ
ভালোবাসা তার লাল ঠোঁটে 
এরকমই
বিন্যাসে খেলা করে
জানিয়েছে চিরহরিৎ গাছ।
তোমাদের ট্রাফিক সিগন্যালে।

আমার তো খাঁচায় রাখা এমনই উত্তাপ
সারা সময় ট্রেন ছুটে যায় -

অলৌকিক এক জানালার পাশে
যারা বাসা বেঁধে আছে
তাদের দেখাই আমি সবুজ সংকেত!

পরোয়া করিনা কিছুই

নির্বাসনের এই সময় পেরোলে
দেখে নিও
মাঝে মাঝে ঋতূকাল

নিজেকেই চেটেচেটে খাই...




৫।।   ∆ পাতা গান ∆



প্রতিটা কনিকার ভেতর আমাদের ঘর-বাড়ি 
সহবাসময় ঘ্রাণ 
যতটা তুমি এবং আমি। 

নিদারুণ রাগ বাজায় যে বাঁশি 
তাকে জাগিয়ে রাখে খোয়াব, ডুলুঙ 
আমের পল্লব...

প্রতিটি চক্ষুদানে মিশে যায় কনিকা।

এক, দুই, তিন 
এই সময় আরোগ্য আল্পনা আঁকে
আর
তুমিও কি কখনো আঁকোনি কাজলের মেহফিল?

সরবতের দ্রবণে মিশে যাই 
তুমি অনায়াসে চুমুক দাও সুমিষ্ট চকমকি

আমার বসতঘর হয়ে বাতিস্তম্ভের দিকে চোখ ছুঁয়ে ছুঁয়ে 
দেখি
পর্যাপ্ত অসুখ।

ও আরোগ্য 
শরীরে এসো এখন

আমপাতা হই।




ছবি বন্দি- মেহবুব গায়েন

°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°

No comments:

Post a Comment