হেমন্ত সরখেল এর কবিতা-
১।
∆ পর্যুদস্ত ∆
দেহের ভেতর থেকে
একটা পচা দেহ বের করে দেখি
অঙ্গ বলতে রয়েছে
শুধু জিভ |
তাড়াতাড়ি
লুকিয়ে ফেলতে চেয়ে দেখি
ব্যাক-এর অপশন হাসছে
দূরে দাঁড়িয়ে | বুঝলাম-
গো-হারা হেরে গেছি আমি |
এবার এ আধগলা নরদেহ কোথায় রাখি ?
২।
∆ দৈববাণী কিংবা ∆
'সব হবে', এটুকু বলে
চুপ করে থেকে গেছে যারা, হয়তো বা
তারপর আর জন্মায়নি কথার গর্ভে কথা কিংবা অতিক্রান্ত সময়
পিঠে বেঁধে এনে দেবে
কবে, কখন, কোথায় 'হবে সব'-এর অতল
শুকনো পাতায় পা চেপে হাঁটে শুধু এটুকু প্রত্যয়ী নিক্কন,
ছেড়ে যাওয়া কোনো উদাসী পবন,
জোলো কোনো শেষ প্রহরের প্রিয় আকাল |
কেন যে চয়ন তবে, ওহে দুরন্ত শিশু
আনমনে তুলে আনা কেন পাহাড়ের গা থেকে
উত্তুরে হিমেল না পাওয়া,
কেন ভেবে নিতে ভাঙে সীমারেখা, অবাধ্য চঞ্চল শিশু,
তুমি তো জানো না, যে আসে
তার আগে ভরাট স্থানের শূন্যতা কতো গভীর
কতো অপূর্ব নির্মম
কী কঠিন তার ফিরে যাওয়া!
'সব হবে', এই মাত্র বলে, আর কাজে মেতেছে যারা
যা হওয়াতে ভাঙি সমগ্র নিয়ম-আচার,
শমন নিশ্চুপ শিয়রে, জ্বরে আত্মচিন্তন
তাদেরই কেউ বলে নানা অছিলায়,দুষ্টু ক্রন্দন
'হবে' বলেই তো এত কষ্ট, বিকার।
চুরমার
হয়ে যাবে তুলাদণ্ড, প্রতারণা।
আধো আধো বোল যদি দৈববাণী হয়
পাবো সাহসী ত্বরণ
'সব হবে', 'হবে সব', এমনই অলিখিত বিশ্বাসে
জেগে থাক মন।
৩।
∆ কায়াকল্প ∆
দুটো খাতাই এক অভিমুখে
শুধু তোমারটা অঙ্কের
আমার শাদা।
কী ভীষণ হিসেবি তুমি!
আতপের ছবি রাখো এঁকে
আমার ফুটন্ত জলে মরে হেজে ব্যাকটেরিয়া
দ্বার ছেড়ে দেয়
অনাদ্যন্ত লোভের জীবনে
মধুপ
জন্মের আগেই স্বৈরিণী হয়
শ্রমিকের লেবেল সেঁটেছি গায়ে।
জেগে থাকার
একমাত্র উপায়
৪।
∆ যাত্রা ∆
যত ছিল যা যেখানে সব
মোছা কী হয়েছে পরিপাটি?
নেই তো-
ক্ষীণাংশ বাকি?
তবে কেন ধোঁয়ার গন্ধ
সুতোর শরীরে
দেখা দেয় অপগণ্ড
পরিত্যক্ত পান্ডুলিপি স্বপ্ন দমকে
সেজে উঠবে বলে আবার বেঁকে বসবে নাকি?
এবারে ক্ষমা যে বারণ
প্রতিজ্ঞা অগুনতি
বুক পকেটে রেখেছি
ভুলে গেলে নাম পাবো ভুলো মন।
৫।
∆ প্রতিশ্রুতি ∆
টিপে টিপে পা
উঠে আসি মন্দিরের সিঁড়ি বেয়ে
থমকে আছো তুমি, দুটো মুঠো ভরে প্রেম
যেন ছুঁয়ে যাব কাঁধ
তুমি কাঁপছো। কেন কাঁপছো তুমি?
এখানেই, এই শীতল পাথুরে শীলনে
থেমে গেছে ফাগ
রেখেছি বসন্তদাগ
মাঙ্গলিক সুতো
কিছুতেই বলোনি সেটা যেটা খুব অনায়াস হতো...
আজ কোনো প্রচ্ছায়া ছায়ার ভেতর থেকে
রেশমের মতো গোটানো দেহে
অন্য গুলালের অভিমুখে পেতে দেওয়া
মাখন মাখন গাল
কপালের বাহানায়
আবীরে সিঁথি প্রান্ত লাল
সটান সরে আসা অন্য কোনো বুকের জ্বরে
অন্য কোনো গন্ধ, অন্য আত্ম-পরে
দুটো মুঠো ভরে আজ তীব্র হুতাস
একটু একটু করে শোষণে রয়েছে জঁরে- ফাগ নির্যাস
বহুদূরে অগোছালো নিকষিত হেম
এইখানে, এই শীতল পাথুরে শীলনে রাখা
আমাদের প্রাক-বর্তমান ফ্রেম...
কোথায় আছো? বাড়িতেই, নাকি জিজ্ঞাসায়
আনমনে পৌঁছেছো মন্দিরে
দেখতে কি গ্যাছো আজ বাঁশি বাজছে কোন্ সুরে?
আমি তো খসা পাতায় রেখেছি উৎসুক নজর
অগুরু চন্দনে যদি
ভেসে আসে ভ্রামরী কোনো খবর!
যদি থমকে দাঁড়ানো ছায়ার ভেতর থেকে
প্রচ্ছায়া ডোবা কোনো সিঁড়ি ভুল করে
আজ পাঠিয়ে থাকো
যদি আজও, আমাদের দেখা হতে পারে, প্রত্যাশা রাখো
দুটো মুঠো ভরে রাখা আবীরে রাঙাবো গাল
ভেবে তুমি হঠাৎ চমকে যাও
পেছনে তাকাও_
এটুকু আশায় শুধু কেটে যাক এবারের ফাগ
'কারো হাতে যেন রঙ মেখো না তুমি!' নিঃশর্ত না-বলা এই শর্তটুকু-
থেকে যাক।
তারপর তো আবারও এইখানেই
এই শীতল পাথুরে শীলন
দূরে দূরে মরে মরে না মরে বেঁচে থাকা রোজ
অযাচিত টুপ টুপ মুক্তোর মালা,
ব্যর্থ কোনো খোঁজ...
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
কবিতাগুলো কবির কথায় ‘টুপ টুপ মুক্তোর মালা’ হয়ে উঠেছে।
ReplyDeleteঅসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। সমৃদ্ধ হলাম মন্তব্যে।
ReplyDeleteচমৎকার সব কবিতা। কবিকে অভিনন্দন 🙏❤️
ReplyDelete