Saturday, 16 July 2022

কবিতা

টুপ বর্ষা সোঁদা টুপ পর্ব-২

  



তৈমুর খান এর কবিতা-


১.
∆ সব পথ রাস্তা হয়ে গেছে ∆


সব পথ রাস্তা হয়ে গেছে 
আমাদের ছোট ছোট রাস্তায় 
অন্ধকার চলাফেরা করে 
হাত ধরাধরি মেঘ নামে 
ফিসফাস কথাদের বেশ আনাগোনা 
তর্জন গর্জন দেখে আমরা ঘরে ফিরি 
পতাকা ওড়ে দেখি সব মোড়ে মোড়ে 

কাদের পতাকা এত  ? 
সব পথ রাস্তা হয়ে গেলে 
এরকম পতাকা ওড়ে ? 
মহল্লা মহল্লা জুড়ে এরকম গলি হয়  ? 
মানুষেরাও পাল্টে যায় অচেনা মানুষে ? 

ঘরে ফিরে আসি —
সারারাত চাঁদ নয় , মৃত মায়ের মুখ মনে পড়ে  ! 



            
২.
∆ যদি ছুঁতে পারো ∆



আমি দৈর্ঘ্যে নেই , প্রস্থে নেই 
শূন্য অবতলে কোথাও নেই 
অথচ আমার ভাষা ব্যাপ্ত চরাচরে 
     শব্দ ও স্বপ্নের তালিকায় 
     বাঁচা ও মরার নির্বাহী ক্রিয়ায় 
     ছলকে ওঠে গন্ধে ধূপে 

    তুমি এসে ছুঁয়ে দাও 
    যদি ছুঁতে পারো 
   যদি এ নিঃসঙ্গতার বেড়া থেকে 
  আমাকে বের করে দাও.... 

     ইহজাগতিক পথে 
     জয় ঘোষণার কাছে 
     কারা কারা গেল? 
আমি শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে যাব 
ওই তো জবাগাছ ! 
কত জবাফুল ফুটে আছে 
 সবাই ডাকছে আমাকে ... 
তুমি ছোঁও 
  একটিবার অন্তত ছুঁয়ে দাও  ! 



 
৩.
∆ আমরা হেমন্তের দিকে যাব ∆



ব্যস্ততায় দুলছে পটভূমি 
কোথাও সুচারু সদ্গতি 
দেখিনি আজও 
         নরম স্নেহের পলি রেখে 
         কবে ঢেউ চলে গেছে 
         চিৎ হয়ে শুয়ে আছে নদী 
           আমরা শুধু মাছেদের ভ্রমে 
          কল্পনার জাল বুনে গেছি 

অনুভূতি, নৌকা আনো 
যতই রোদের বিলাসী দিন 
জ্বালাক আগুন—
আমরা হেমন্তের দিকে যাব 
হয়তো ফিরবে আবার 
করুণার শিশিরে ঝিকিমিকি !


ছবি- অর্ণব জানা
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

পলাশ দাস এর কবিতা-



১.
∆ দোকান ∆


মাথার ওপর একটা আকাশ 
আর তার শরীরের ভিতর একটা জালের মতো স্তর 
সেখানে মুষ্টিমেয় আমরা কয়েকজন 
হাত পা নেড়ে যাচ্ছি 
মাথা নেড়ে যাচ্ছি 
একটা দোকান আর কাচের ওপাশের মুষ্টিমেয় শরীর 


২.

∆ যেদিন ∆


যে বিড়ালটিকে প্রথমে খেতে দিত বীরেনরা 
সেই বিড়ালটি আমাদের বাড়িতে আসত, খেত 
সুবিধা মতো এ-ঘর ও-ঘর করত   
বারান্দায় শুয়ে থাকত দীর্ঘক্ষণ 

সেই বিড়ালটির দেখাদেখি আরও একটি বিড়াল 
প্রিয় হয়ে উঠল বীরেনদের  
আমাদেরও প্রিয় হয়ে উঠল সে, কিছুদিনের মধ্যে 
প্রথমের বিড়ালটি যেমন ঘর বারান্দা করত, 
পরেরটিও তেমন ঘর বারান্দা করতে শুরু করল 

এরপর একদিন প্রথমটিকে আর বীরেনরা খেতে দিত না  
আমাদের এখানেও অচিরেই তারও খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল  


৩.
∆ দাঁড়াই ∆

অন্ধকার যখন কেকের মতো হয়ে ওঠে 
মাথার দুপাশে ওপরে সুস্বাদু রঙ ও গন্ধের 
তখন থাবা বসায় বাড়িয়ে দু হাত 
 
অন্ধকার বৃষ্টির মেঘের মতো হয়ে উঠলে 
খুব আকাঙ্ক্ষিত হয়ে ওঠে রোদের উঠোন  
  
গাছের নীচের ছায়ার শরীরে অন্ধকার জমলে  
তার শরীরের সাথে মিশে যেতে যেতে 
অন্ধকার গাছ হয়ে ওঠে থমকে থাকা মাঠের মতো সময়ে


ছবি- অর্ণব জানা
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

ঋতুপর্ণা খাটুয়া’র লেখা-





১.
∆ জুলাই সিরিজ (১) ∆

প্রতিবার আমি ভাবি, আমার হাত থেকে আর কোনও
খাজা কবিতা বেরোতে দেবো না, এই ভেবে সরে আসি
ধ্বংসস্তূপ হতে। জানালার পর্দায় গিঁট বেঁধে তাকে
অলীক এক তানপুরার আকার দিয়ে গরাদে ঝুলিয়ে
দিই গান। একটু আধটু বই পড়ার অভিনয় করি। এদিকে
অভিনয়েও পটু নই,  সে হিসেবে চটচপ অভিনয় ছাড়তে
বাধ্য হই। ওপারের অমোঘ ডাকের মতো করে ডাক আসে
দুপুরে ভাত খাওয়ার। হাতে ভাত মাখতে মাখতে কিছু খাজা
কবিতা আসে চচ্চড়িতে। তাদের আমি অপেক্ষা করাই।

হাবিজাবি ইতর-ভদ্র শব্দগুলো এত সহজে নিজেদের
হক ছাড়ে না। থালার পাশে ঘোরে, অধিকারের দাবীতে।

কিছুতেই বোঝাতে পারি না ওদের, অসময়ে
শব্দের গতিবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা আমার নেই।



২.
∆ জুলাই সিরিজ (২) ∆


সে রূপকথারা রাতের চাঁদ থেকে নেমে আসে।  ছুটে আসে কিনা জানি না। যখন দূরে কালো নারকেল গাছের ফাঁক দিয়ে আলোময় জানালাটা নিভে যায় তখন বয়সের ধারনায় কেমন যেন মনে হয়। মনে হয় এবার আদরও নামল বুঝি ও জানলা বেয়ে রূপকথার দেশে। রাজপুত্তুর আর রাজকন্যার রাতপোশাকে ক্ষণিক বিরতি।

একটু পর দেখি টর্চ জ্বেলে, চাঁদ হাপুস নয়নে রূপকথা খুজতে বেরোয়।  তার পা টলে। ঝিঁঝিঁ পোকারা আর নাইট ডিউটি করবে না বলে হল্লা করে।  তাদের সাথে জোনাকিরা তাল মেলায়।  এরোপ্লেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
ঘোষনা করে। কোনো অ্যারিস্টোক্র্যাট মেয়ে মশা নাকি বস্তির ঝি মশা আমায়  কামড়াতে ছুটে আসে ঠিক বোঝা যায় না। 

গ্লাস আর বোতলের ইগোর লড়াই তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ পর্যন্ত গড়ায়।  ‘আত্ম সম্মান নিয়ে ফিরে যাওয়াই ভালো’ এই বলে গ্লাস, ড্রাঙ্ক অবস্থায়, হাত থেকে পড়ে আত্মহত্যা করে। এদিকে জানলা দিয়ে আদর শেষে ফিরতে
গিয়ে রূপকথার পা কাটে।

জীবনে সবই দুর্ঘটনা — এই বলে আমি সব কেস ডিসমিস করে দিই জোর করে।




৩.
∆ জুলাই সিরিজ (৩) ∆


গড়গড় করে বলে যাওয়ার মতো কিছু কথা রিহার্স করছি মনে।
কমবয়সের প্রেমের মতন কিছু একটা রোগে ধরেছে হয়তো।
তাতে বুঁদ হয়ে আছি। উড়ে যাচ্ছি। চারিত্রিক স্খলন দেখছি
আয়নায়। এত লুচ্চা একটা মানুষ আমার ভেতরে থেকে এতদিন
বিড়ি ফুঁকছিল,  খেয়ালই করিনি। হয়তো সে দেওয়ালে ঠেস দিয়ে
দাঁড়িয়েছিল, আমি পাশ কাটিয়ে গেছি, ভদ্রতার দোহাই দিয়ে।
হায়রে জুলাই,এমন তরতরে বৃষ্টি হচ্ছে, দেবী গলে গলে পড়ছে,
শক্ত কাঠামো ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে, ওকে নগ্ন করল জুলাই।
স্যাঁতস্যাঁতে ভীরু  উচ্ছিষ্ট আবহাওয়া, প্রেম। বয়স যত বাড়ছে,
ততই আত্মার নগ্নতা যে একটি উদযাপনের বিষয়, তা জানছি।
নিজের ভেতরে এতদিন যে যীশুর আরোপিত মহিমাগুলো
দেখতাম, তার ভ্রম কেটে গিয়েছে। দুষ্ট, লোভী,  শয়তান,
ইতর, জানোয়ার ও অপরাধপ্রবণ যে মানুষটা বেরিয়েছে
তাকে আমি গড় করি। তুমিই আমার লুক্কায়িত মানিক।
গচ্ছিত রত্নাকর। নির্লজ্জ এক মাইডিয়ার মানুষ।


অলংকরণ- মেহবুব গায়েন
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••



No comments:

Post a Comment