Thursday, 1 October 2020

কবিতা

মাটি খোসা পর্ব-১

কবি কুমারেশ তেওয়ারী’র কবিতা-





১।।  ∆ ছুঁচসুতো ∆



সেলাইয়ের পাঠ নিয়ে ব্যস্ত থাকি, আত্মমগ্ন হই
যেখানে যা ছেঁড়াফাটা, জাগতিক বিস্ফোরক ভ্রম
আনাড়ি আঙুলে রাখি নবিসের সেলাই প্রয়াস
আলোর পর্দার ফাটা অংশ দিয়ে জায়মান কালো
অন্ধকার, ঢুকে আসে ভাঙনের কাল স্রোত হয়ে
সেখানে সেলাই দিই তড়িঘড়ি, অমৃতজাতক

ছুঁচের ছিদ্রের পথে সুতো পরাবার কালে দেখি, 
ওইপারে অভিসার, বৃন্দাবন, বিনোদিনি রাই
গোপন হাঁড়িতে রাঁধে হিরণ্ময় ভাতের সুঘ্রাণ

বিত্রস্ত আলোকে ঠাট, বিভঙ্গের সামান্য বদল 
টেরিকাটা শ্যাম দেয় অনন্তের ফুঁয়ের নিদান
এখনও অপাপবিদ্ধ, থেকে থেকে তাহার বাঁশিটি
কঠিন আখরোটের হৃদভেজানো মর্মধ্বনি তোলে 

সুতোতে নিদান রেখে ছুঁচছিদ্রে সযত্নে পরাই
রাই অঙ্গ ছুঁয়ে সুতো শ্যামতনু কেমনে বেড়ায়!





২।।  ∆ গৃহ ∆



আমার যে ঘর, তাকে গৃহ বলতেই ভালোবাসি
আমাকে প্রাচীনপন্থী যদি বলো
পদাবলী থেকে শুনিয়ে দেবই আনপথ কথা
বিদ্যাপতির ‘তাতল সৈকত’ থেকে
তপ্ত বালি এনে দেখাবো তোমাকে
বালির হৃদয়ে এখনও রয়েছে লেগে
                                           অনন্ত পিপাসা

শুদ্ধ ও কোমল নি-র দিকে ঠেলে দিয়ে
তোমার পায়ের গোছে বেঁধে দেব নাচের ময়ূর
অতঃপর নাচ-মুদ্রাটির থেকে তুলে নিয়ে
ফুলবন 
আমারই ঘরের কাছে এসে চেঁচিয়ে ডাকবো,
ও আমার গৃহ দরজা খোলো
হ্যাঙ্গারে ঝোলানো জামাটির ছেঁড়া বোতাম এখন
খোঁজ করবো আমি, চোখের নিশিপদ্মে নীল আলো জ্বেলে

ছুঁচসুতো কি সেতু হয়ে উঠতে পারেনা? সম্পর্ক সেলাই?




৩।।  ∆ মৌচাক ∆



তালা খুলে ঢুকে যাও অন্ধকার ঘরের ভেতরে
হয়তো প্রথমে দেখতে পাবে না কিছু
সাদা দেয়ালগুলিও যেন লুকিয়ে রেখেছে রং
পরীক্ষা নিচ্ছে তোমার 
কতটা আলোক আছে চোখের মোহনে

ম্যাঁও শব্দে লাফ দিয়ে তোমাকে ডিঙিয়ে যাবে
কোনো এক বেড়ালের চোখ
কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে পুনরায় থিতু হয়ে তাকাবে আবার
দেখবে কীভাবে রূপ নিচ্ছে আলো
প্রতিটি আসবাবের থেকে, বেরিয়ে আসছে নৃত্য আর বাক

তোমার ভেতরে মধু, গড়িয়ে নামছে 
বুঝে নিয়ো অতলান্তে জেগেছে মৌচাক




৪।। ∆ বিষদাঁত ∆



বিষদাঁত নিয়ে কতখানি খুশি, সাপ?
এই প্রশ্নে মাথা চুলকোতে চুলকোতে এক বক
উড়ে যায় দিগন্ত ছাড়িয়ে
ঠোঁট থেকে তার খসে পড়ে মাছ

কিছুটা দৌড়ে যাই, উত্তর চাই উত্তর চাই

ততক্ষণে একটি কাঠবিড়ালি 
আমাকে একটুকরো উপহাসে ভাসিয়ে দিয়েই
দৌড়ে উঠে যায় তার গাছের কোটরে
কিছু পরে ঠোঁটে চেপে ধরে নিয়ে আসে
শুকিয়ে যাওয়া একটি বিষদাঁত
উপুড় করতেই ঝরঝর ঝরে পড়ে জ্যোৎস্নার হাসি

আমিও উত্তর চাই বলতে বলতে 
দৌড়ে যাই আলের দিকে
সেখানে তো এক অতিবৃদ্ধ সাপ বহুকাল ধরে
দেখে আসছি তার আয়ুক্ষয়

বিষদাঁত নিয়ে খুশি তো হে বয়ঃবৃদ্ধ সাপ?
যেই খুলেছে হাঁ, দেখি, তার মুখের ভেতরে
থাম ভেঙে বেরিয়ে আসছেন নরসিংহ!
প্রহ্লাদের হাতের ভেতরে প্রাচীন বিষ্ণুপুরাণ!



অলংকরণ- মেহবুব গায়েন

°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°


No comments:

Post a Comment