অনিন্দিতা মণ্ডল এর কবিতা -
∆
গোলাপী সন্ধ্যামণি।
টানা আটদিন বৃষ্টিতে উঠোনজুড়ে রোদের অস্পষ্ট পায়ের ছাপ—
কোনোটা ঘাড় গুঁজে পড়ে আছে ,
কোনোটা দাঁড়িয়ে আছে বল্লম হাতে ।
দেওয়ালের গায়ে পুরোনো আতরের গন্ধ
জমিয়ে রাখছে বিকেলের সূর্যছোঁয়া দোতলা ।
আঙুল ছুঁয়ে চলে যাচ্ছে টুকরো টুকরো যুদ্ধ
আর হরিণীর ডাক মিশে যাচ্ছে শাঁখের আওয়াজে।
বুকের ভিতর ইমোশনাল মথ সিক্ত ডানায়
তুলে রাখছে আমাদের সংসারিক স্বপ্ন দেখার দিনগুলি ।
পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে শরীর ছেড়ে
তুমি কাফকা পড়ছ , সে আওয়াজ ভেসে আসছে
এখন ,
একা হতে হতে আজ এসে দাঁড়িয়েছি
খোলা আকাশের নীচে—
যে আকাশটা টানা বৃষ্টিতে কেমন চুপ হয়ে গেছে।
এই উদাসীন সন্ধ্যায় নেমে আসছে শারীরিক কান্না,
অথবা তুমি গোলাপী সন্ধ্যামণি হয়ে ।
∆
দূরে থাকা সহজ
যে কাকটা মারা গেল সেদিন ভোরে
সে জানত বেঁচে থাকার কৌশল ,
বারোমাসী মেঘ বিশ্রী গরমে গেয়ে ওঠে
সাদাকালো সিনেমার পুরাতনী গান ,
সস্তার বিজ্ঞাপনে আবহাওয়া হেসে ওঠে
সব আলো নিভে যায় , পড়ে যায় গ্লাস...
কাকটা আত্মহত্যা করেছে সেদিন
অথচ কোনো শোরগোল নেই।
কাকটা কি জানতো— দূরে থাকা বড্ড সহজ ,
আর কাছাকাছি থাকতে গেলে উদ্দেশ্য লাগে কিংবা অজুহাত ?
∆
মা এসেছে কখন !
কাল রাতে রোদ্দুর পড়েছিল হাতে
আলো বলতে যা সবাই জানে , তার নিকষ কালো রূপ
আমার ভিতর ঢুকেছিল দামাল ছেলের মতো
বর্ষার সোঁদা বিছানায় মা এসে কখন বসেছে কেজানে
মায়ের চুল সরিয়ে নাকের ডগার কালো তিল ছুঁয়েছিলাম ,
মাথার ভিতর—মাছের মাথা দিয়ে রাঁধা মিষ্টি বাঁধাকপি ,
মোটা ডালে মাখা ভাত , আর একটা লড়াইচিন্হ
নেচে উঠেছে ভাসানের রাতে মাতালের মতো।
একপিঠ চুলে লেগে আছে পুরোনো মিছিলছাপ ,
জোছনার গায়ে ফুটে উঠছে মায়ের সন্ধ্যারতি ,
সোঁদা বিছানা উষ্ণতায় শুকিয়ে গেছে ,
চারপাশে গভীর অন্ধকার , কোনো আলো নেই
তবু মা আবার ছেড়ে যাচ্ছে ,মাথায় বাম লাগিয়ে দিয়ে
মা জানত ,মাইগ্রেনে আমি আলো সহ্য করতে পারিনা ।
অলংকরণ - ঋতুপর্ণা খাটুয়া
••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
No comments:
Post a Comment